ঝালকাঠিতে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার ঘর-বাড়ি, গৃহপালিত পশু, শস্যখেত, মৎস্য চাষ, গাছ-পালা, রাস্তা-ঘাট ও বেরিবাধসহ ক্ষক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ’ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত এ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে জেলায় বেরিবাধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩.৮৯২ কিলোমিটার। যার ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। জরুরী মেরামতের জন্য সরকারের কাছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনা প্রেরণ করেছে। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় সাড়ে ১১কিলোমটার এলাকা।
জানা যায়, ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী এবং গাবখান চ্যানেল প্রধান ৩টি নদী। দু’পাড়ের কিছু স্থানে বেরিবাধ থাকলেও এখনও রক্ষাবাধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি সবখানে। যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নি¤œচাপ হলেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় তীরবর্তি এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সাম্প্রতিক সিত্রাংয়ের ফলে জেলায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন হয়েছে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ’ টাকা। এরমধ্যে জেলায় বেরিবাধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩.৮৯২ কিলোমিটার। যার ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।ক্ষ
বিষখালী নদী তীরবর্তি সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মাসুম, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সুরু মিয়া, কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী রক্ষাবাধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
তারা জানান, বিষখালী নদীর গর্ভে বছরের পর বছর ভাঙনের ফলে শত শত বিঘা জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতভিটা, বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মূল্যবান সম্পদ বিলীন হয়ে গেছে। যেসব এলাকায় তীব্র ভাঙন রয়েছে, সেসব এলাকায় স্থায়ী সুরক্ষা বাধ নির্মাণ করলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পেতো।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ঝালকাঠি জেলায় প্রধানতম সুগন্ধা ও বিষখালী নদী। এ নদী দুটির ডান এবং বাম তীরে রয়েছে ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলা, বিষখালী তীরে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা। নদী তীরবর্তি বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন প্রবণ এরিয়া রয়েছে। এ ভাঙন প্রবণ এরিয়ার মধ্যে নলছিটি শহর, তৎসংলগ্ন ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট, বহরমপুর, কাঠিপাড়া এবং মগড়। এ এরিয়াগুলো বর্তমানে অধিক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুকিপুর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে একটি প্রকল্প উপস্থাপনা করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করেছি। এ পরিকল্পনার উপরে গত এপ্রিল মাসে একটি যাচাই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলো। তার আলোকে পুনরায় একটি পুর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রেরণ করেছি। এ প্রকল্পটি আশা করি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুমোদন হবে। অনুমোদন পেলে এ প্রকল্পের আওতায় ঝালকাঠি উপজেলা এবং নলছিটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ১১কিলোমিটার রক্ষাবাধ বাস্তবায়ন করতে পারবো। যার ফলে গাবখান চ্যানেল এবং বিষখালী নদীর আংশিক ও সুগন্ধা নদীর উভয় তীরে যে ঝুকিপুর্ণ অংশগুলো রয়েছে সবগুলোই রক্ষা পাবে।
তিনি আরো বলেন, সুগন্ধা-বিষখালী নদী দুটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ এবং ভাঙন কবলিত। এ নদীর অনেকাংশেই বেরিবাধ রয়েছে। লঘুচাপ, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের প্রভাবে অনেকস্থানেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো আমরা ইতিমধ্যে সনাক্ত করে ওইসব স্থানে আমরা জরুরী কাজ বাস্তবায়নের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তারা ইতিমধ্যে অনেকগুলো জরুরী কাজ ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী কিছু কাজ চলমান এবং কিছু কাজ খুব শিঘ্রই শুরু হবে। রাজাপুর উপজেলায় এবং কাঠালিয়া উপজেলায় বিষখালী নদীর ডান তীরে বন্যা প্রতিরোধে যতটুকু প্রয়োজন সে তুলনায় কম আছে। প্রয়োজনের চাহিদা নিরিক্ষে বেরিবাধ নির্মাণের জন্য আমরা একটা সমীক্ষা প্রকল্প শুরু করেছি। এ প্রকল্পের তৃতীয় পক্ষ সিজিআইএস কর্তৃক চলমান রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে আমাদের একটা খসড়া প্রতিবেদন দিয়েছে। এ প্রতিবেদনে আমরা কিছু মতামত সন্নিবেশিত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তারা ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমাদেরকে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশমালা প্রেরণ করবে। এর ভিত্তিতে স্থায়ী ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করবো।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, গত সিত্রাং এর ফলে লঘুচাপে ও উচ্চ জোয়ারের প্রভাবে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালীর বেশ কয়েকটি অংশ নদী ভাঙন প্রবণ ছিলো। তার মধ্যে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে আমরা মগড়, দক্ষিণ মগড়, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের উত্তমাবাদ এবং গাবখান চ্যানেলের তীরবর্তি গাবখান-শেখেরহাট রাস্তার ও অপরপাশের সারেংগল এরিয়া, সাচিলাপুরের ক্ষতিগ্রস্ত বেরিবাধ , বাদুরতলা লঞ্চঘাট স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সকল ক্ষতিগ্রস্ত স্থানকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে জরিপ কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে বাদুরতলা অংশে জিও ব্যাগ ভরাটকরণ সম্পন্ন হয়েছে। মগড় এবং উত্তমাবাদের অংশে জিও ব্যাগ ভরাটকরণ কাজ চলমান রয়েছে।
কেএস