মুন্সীগঞ্জের ৬৪টি কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষিত ২ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আলু। বর্তমানে আলুর মূল্য আরও কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। বস্তা প্রতি উৎপাদন খরচ ১৩শ’ টাকা হলেও বর্তমানে বস্তা প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আলুর মূল্য কমে যাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ থেকেই ৫৫০ টাকা লোকসানের কবলে পড়েছে তারা।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৪টি সচল হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বীজ আলুর পরিমাণ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। আর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে এসব হিমাগারে এখনও মজুদ অবস্থায় আছে অবিক্রিত দুই লাখ ৭৮ হাজার ১৭৯ মেট্রিক টন আলু।
টঙ্গীবাড়ীর কৃষক জিলুর বেপারী জানান, এবার তিনি ২ হাজার বস্তা আলু স্থানীয় একতা কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করেছেন। কোল্ডস্টোরেজ ভাড়াসহ বস্তা প্রতি তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৩শ’ টাকা। আর বর্তমানে বস্তা প্রতি আলুর বাজার মূল্য ৭শ’ টাকা হওয়ায় লোকসান হবে বস্তা প্রতি ৬শ’ টাকা। তাই দুই হাজার বস্তায় ১২ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে তার।
আলু ব্যবসায়ী মনির বেপারী জানান, উৎপাদন ও কোল্ডস্টোরেজ ভাড়াসহ বস্তা প্রতি খরচ পড়েছে সর্বনিম্ন ১৩শ’ টাকা। আর এখন প্রতি বস্তা আলুর মূল্য ৭০০ টাকা। সেই হিসেবে বস্তা প্রতি লোকসান হবে সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা।
কৃষক জহির সিকদার জানান, কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করা ১০০ বস্তার মধ্যে ১০ বস্তা আলুতে পচন ধরায় তা ফেলে দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় লাভতো দূরের কথা, এখন মূলধন উঠানোর পরিস্থিতিও নেই। ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো তাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি। তাই রাতে ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসেনা।
এলিট কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার মো. আওলাদ হোসেন জানান, জেলার ৬৪টি কোল্ডস্টোরেজে এখন সংরক্ষণ করা আলু রয়েছে ৫০ শতাংশ। বর্তমানে বস্তাপ্রতি আলু ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। তাই বস্তা প্রতি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৬শ’ টাকা।
গজারিয়া উপজেলায় অবস্থিত মেঘনা কোল্ডস্টোরেজের স্টাফ দেলোয়ার হোসেন জানান, কৃষকের আলু হিমাগারে রয়েছে। তবে বাজারে দাম কম হওয়ায় তারা আলু বের করছে না। বর্তমানে আলুর মূল্য আরও কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক।
কদম রসূল কোল্ডস্টোরেজ ম্যানেজার দুলাল মন্ডল জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাড়াও এবার দেশের অন্যান্য জেলায়ও আলু উৎপাদন হয়েছে। এর ফলে গত মৌসুমের তুলনায় এবার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে ২৫ শতাংশ বেশি আলু সংরক্ষণে রয়েছে। প্রতিটি কোল্ডস্টোরেজে এখন প্রায় ৫০ শতাংশ আলু মজুদ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম আমার সংবাদকে বলেন, যেসব কৃষক আলু জমি থেকে উত্তোলনের পরই বিক্রি করে দিয়েছেন তারা লাভবান হয়েছেন। আর যেসব কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কোল্ডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করেছেন তারা বস্তা প্রতি ৬শ’ টাকা লোকসানের কবলে পড়েছেন।
তিনি বলেন, দেশে আলুর চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিক টন আর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে।
কেএস