বাবার লাশ বাড়ি রেখে এইচএসসি পরীক্ষায় সানজিদা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম

এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ হওয়ার পর ইচ্ছে ছিলো বাবার সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করবে সানজিদা আক্তার। পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়েছিলো বেশ ভাল। গত ৬ নভেম্বর থেকে অন্যান্য পরীক্ষার্থী বাবা-মার সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলেও সানজিদার সেই সৌভাগ্য হয়নি। কারণ তার বাবা ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো।

শুধু তাই নয়, রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে শোকে ব স্বজনেরা যখন লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ঠিক সেই সময় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিতে যায়। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সানজিদা।

সানজিদা আক্তার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বাইমাইল গ্রামের শামীম আল মামুনের মেয়ে ও টাঙ্গাইল শহরের সরকারি কুমুদিনী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। সে শহরের সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার ইংরেজি দ্বিতীয় পরীক্ষার পরীক্ষায় দেয়। তার বাবা শামীম আল মামুন ওই গ্রামে মৃত ছোরহাব হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন দলিল লেখক। সানজিদা দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ছোট।

তার বড় ভাই ইমরান হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর তার বাবা শামীম আল মানুষ পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের একটি ক্লিনিকে চার দিন চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় তাকে ঢাকার ইবনে সিনা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার অপারেশন করা হলেও তার আর জ্ঞান ফিরেনি। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।

রোববার সকালে বাইমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাযায় দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাবু, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হেলাফ ফকিরসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেয়।

সানজিদা আক্তার জানান, আমি বাবাকে খুব সম্মান ও ভালবাসতাম। তাই তার নির্দেশনা মোতাবেক মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়া করতাম। আমার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাবু জানান, বিষয়টি খুব হৃদয় বিদারক। একদিকে বাবা হারানোর শোক অন্য দিকে পরীক্ষা। সানজিদার বাবার আত্মার মাগফেরাত ও সানজিদার জন্য দোয়া রইলো।

কেএস