কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২, ০৩:৫১ পিএম

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ইতিহাসের একটি মেগা প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের ৫৩৭ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে অনুমোদন প্রাপ্ত এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত চার বছরে অগ্রগতির ১৭ শতাংশে আটকে গেছে। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর। বাকি ৮৩ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই বর্ধিত সময় চান ইবি প্রকৌশল বিভাগ।

পরিকল্পনা বিভাগ বলছে, সময় মতো প্ল্যানিং ড্রয়িং ডিজাইন সম্পন্ন করে দরপত্র প্রক্রিয়াসহ কার্যাদেশ চুক্তি সম্পন্ন করতে প্রকল্পের নির্মাণ শুরুতে বিলম্ব হয়। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের সমন্বয়হীনতা ছিল কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, নির্ধারিত অভিন্ন প্ল্যানিং ড্রয়িং ও ডিজাইনে ১৪টি ১০ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইবি প্রকৌশলী বিভাগ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ইবি প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা সমন্বয়হীন আচরণের কারণে থমকে যায় নির্মাণ কাজের গতি। ইবি ক্যাম্পাসের উত্তরাংশে শিক্ষক আবাসনের জন্য ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্লোর ও ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হোসেন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

এখানকার ফোরম্যান মিজানুর বলেন, একই জমিনে পাশাপাশি অনেকগুলো ১০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলছে। আমাদের কোম্পানি নির্ধারিত ড্রয়িং ও প্ল্যানিং অনুযায়ী প্রি-কাস্ট পাইলিং ৫০ ফুট গভীরে স্থাপন করেছে। অথচ পাশেই অন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের ১০ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণে প্রি-কাস্ট পাইলিং ৩৫ থেকে ৩৮ ফুট গভীরে।

এছাড়া ক্যাম্পাসের পশ্চিমাংশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমসিপিএল কনস্ট্রাকশন লিমিটেড প্রায় ৩২ হাজার বর্গফুট ও ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ করছে। এখানকার প্রি-কাস্ট পাইল ড্রাইভার বকুল মিয়া জানান, আমরা বিভিন্ন প্রজেক্টে সব ধরনের বহুতলবিশিষ্ট ১০ তলা ভবন নির্মাণে বেজমেন্ট প্রি-কাস্ট পাইলিং ন্যূনতম ৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত করেছি। সয়েল টেস্টের ভিত্তিতে কোথাও কোথাও ১০০ বা তারও অধিক  দৈর্ঘ্যরে পাইল স্থাপন করেছি। কিন্তু এখানে আমরা ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে পাইল স্থাপন করছি। কারণ ইবির ইঞ্জিনিয়াররা এভাবেই করতে বলছেন।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমসিপিএলের নিজস্ব সাইট ইঞ্জিনিয়ার মুন্না আহমেদ বলেন, ৩২ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা একাডেমিক ভবনের কার্যচুক্তি মূল্য ৭০ কোটি টাকা। ৮ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা শেখ রাসেল হল কার্যচুক্তি মূল্য ২১ কোটি টাকা এবং প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা ছাত্রহল-২’র কার্যচুক্তি মূল্য ৪৮ কোটি টাকা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাইসা কনস্ট্রাকশন লিঃ বা এমসিপিএল তিনটি প্রকল্পেই ৩৫ থেকে ৩৮ ফুট লম্বা প্রি-কাস্ট পাইলিং ব্যবহার করছে, যা এ ধরনের বহুতল ভবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনাতেই তা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন প্রকল্পের মাত্র ১৭ শতাংশ অগ্রগতির কথা স্বীকার করে কাজের ধীর গতির কারণ হিসেবে বাজার মূল্যকেই দায়ী করলেন ইবির প্রকৌশল বিভাগের সাইট ইঞ্জিনিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম।

তবে সব অভিযোগ নাকচ করে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্র্রকৗশলী মুন্সী শহীদ উদ্দিন মোঃ তারেক।

তিনি বলেন, অভিযোগ যেকেউ করতেই পারে, সেটা প্রমাণ করুন। এছাড়া প্রকৌশল বিভাগের কোনো সহকর্মীর সঙ্গে দূরত্ব নেই। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। তিনি জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ঠিকাদাররা কাজ করতে গড়িমসি করছে। প্রকল্পের অগ্রগতি সর্বশেষ ১৭ শতাংশ হলেও বাকি কাজ শেষ করতে ব্যয় না বাড়িয়ে আরও দুই বছর সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক নওয়াব আলী খান জানান, যেকোনো মূল্যে প্রকল্পের কাজকে ব্যাহত করতে পারে এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই তা তদন্ত করে উদঘাটন করা হবে এবং কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি মেগা প্রকল্প।

কেএস