ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০৩:১৪ পিএম

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজী (সি.সি.ইউ) বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান’র দায়িত্ব অবহেলাসহ ইচ্ছাকৃত মনগড়া খামখেয়ালিপনায় কারণে রেনু বেগম (৫৫) নামের এক  নারী মৃত্যু হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মরহুমার ছেলে মোঃ আরাফাত চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার মা রেনু বেগম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রব বেপারী এর কন্যা। গত ১৫/০৮/২১ ইং তারিখ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত ২১/০৮/২১ ইং তারিখ সকালে কার্ডিওলজী (সি.সি.ইউ) বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এম.এ সালাউদ্দিন রাউন্ডের সময় রোগী রেনু বেগম কে দেখে জানান, আরো ২/৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থা বুঝে সবকিছু বলা যাবে। কিন্তু ওই দিনই রেনু বেগম কে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় কার্ডিওলজী বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান। তখন আরাফাত চৌধুরী, কার্ডিওলজী বিভাগের অধ্যাপক‍‍`র ওই কথা ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান কে বলে প্রশ্ন তুলে আপনি কেন রিলিজ দিলেন? এর পরই ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে আরাফাত চৌধুরী কে থাপ্পড় মারতে যায়। পরে বিষয়টি অধ্যাপক ডাঃ এম.এ সালাউদ্দিন কে জানালে ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। গত ১৭/১১/২১ ইং তারিখে রেনু বেগম অসুস্থ হলে আবারো শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজী  বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গত ১৯/১১/২১ ইং তারিখে ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান হাসপাতালে অসুস্থ রেনু বেগমকে দেখা মাত্রই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। আরাফাত এ সময় ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান‍‍`র কাছ জানতে চায়, রোগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রেফার করে দেন। রোগী নিয়ে ঢাকা চলে যাই। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাক্তার কি তুমি না আমি? ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে রোগী নিয়ে চলে যাও।

আরাফাত চৌধুরী মায়ের সুচিকিৎসা পাবার জন্য ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামানকে বলেছে, তার মা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। তার নানার নাম চাঁদপুর সদর উপজেলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলক স্তম্ভের তালিকায় ২৬ নম্বরে রয়েছে।  মুক্তিযুদ্ধে তার নানা শহীদ হবার কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোকবার্তা দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুদানসহ সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হিসেবে সি.সি.ইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ কথা শুনে ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান বলেন, এ সব ইতিহাস বলবি তোর ঘরে বা জনসভায় বসে। এটা হাসপাতাল। এখানে এই সব কথার কোন মূল্য নেই। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এখন চলে যাও। মনে কষ্ট নিয়ে আরাফাত তার মা রেনু বেগম কে নিয়ে বাসায় চলে যায়। গত ২৩/৮/২২ ইং তারিখে  রেনু বেগম আবারো অসুস্থ হলে শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগে ভর্তি করা হয়। রোগী ভর্তির সময় আরাফাতের বাবা আবুল কালাম চৌধুরী ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান‍‍`র কাছে গিয়ে অনুরোধ করে বলেন, তার ছেলের কথায় কোন ভুল হলে সেজন্য ক্ষমা চাচ্ছি। তবুও তার স্ত্রীর সুচিকৎসার ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময়ও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা? জানতে চেয়েছেন। পরপর দু‍‍`বার উন্নত চিকিৎসার কথা বললেও ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান সঠিক কোন পরামর্শ দেয়নি। রেনু বেগম হঠাৎ আবারো অসুস্থ হয়ে পরলে গত ২৭/১১/২২ ইং তারিখ রাত ১২:৩৫ মিনিটে শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগে ভর্তি করা হয়। রোগী হার্ট অ্যাটাক করেছে এমন কথা বলে ইর্ন্টানী চিকিৎসকরা ট্রোপনিন-আই, আরবিএস, ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করতে দেন। ওই রাতে আমার সাথে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায়, টাকা যোগার করে সকালে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্ত ২৮/১১/২২ ইং তারিখে  ওই ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান সি.সি.ইউ ওয়ার্ডে এসে অসুস্থ রেনু বেগমকে দেখা মাত্রই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। এ সময় তিনি রোগীকে রেফার করেন ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট (ঘওঈঠউ) তে। ঢাকা নিয়ে যাবার প্রস্তুতির সময় রেনু বেগম মারত্মক অসুস্থ হয়ে কয়েক বার বমি করে, শরীরে ঘেমে যাবার পাশাপাশি ঠান্ডা হয়ে যায়। উপায়ন্ত না পেয়ে তাকে নগরীর রুপাতলী ‍‍`আবদুল্লাহ হাসপাতাল‍‍` এ নিয়ে যাওয়া হয়।  ডাক্তার না থাকায় ভর্তি করা হয়নি। আশংকাজনক অবস্থায় ২৮/১১/২২ ইং তারিখেই শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগে ভর্তি রেনু বেগমকে ভর্তি করা হয়।

পরদিন অর্থাৎ ২৯/১১/২২ ইং তারিখে সকালে আমার মা রেনু বেগম সি.সি.ইউ তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। উপরোক্ত বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করে আরাফাত বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন এবং কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দিতে চাইলে তারা অভিযোগ না নিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেন। গত ৩০/১১/২২ ইং তারিখে আরাফাত শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে। যার বিষয় হলঃ- ‘হৃদরোগ বিভাগে ডাক্তারের অবহেলায় মৃত্যু হওয়া প্রসঙ্গে’।

সংবাদ সম্মেলনে আরাফাতের পিতা নগরীর ৭ নং ওয়ার্ডের ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম চৌধুরীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমার বন্ধুর ছেলে হল ডাঃ মুশফিকুজ্জামান। পারিবারিকভাবে কোন দ্বন্দ্ব নেই। তার বাবাও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ডাঃ মুশফিকুজ্জামান কে তার পিতা অসুস্থ অবস্থায় প্রায়ই বলতো, তোর মত ডাক্তারের কথায় ঔষধ খাবো না। দরকার হলে মারা যাবো। তিনি ফামের্সী থেকে ঔষধ কিনে খেতেন। সন্তান হৃদরোগের ডাঃ হলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ সন্তানের পরামর্শে ঔষধ খাননি পিতা। যেখানে আমি নিজে ক্ষমা চেয়েছি সেখানে তার পরও আমার স্ত্রীকে সুচিকিৎসা দেয়নি ডাঃ মুশফিকুজ্জামান।

মরহুমার ছেলে মোঃ আরাফাত চৌধুরীকে উপস্থিত সাংবাদিকরা তার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণসহ চাই ডাঃ মোঃ মুসফিকুজ্জামান এর শাস্তি। যাতে ভবিষ্যতে কোন রোগীর সাথে খাপখেয়ালীপনা না করার সাহস পায়।

কার্ডিওলোজলি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ মুশফিকুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তা শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আমি লিখিত জবাব দিয়ে দিয়েছি। তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়নি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেএস