ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় নির্যাতনের শিকার তরুণী

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৬:৩৯ পিএম
প্রতীকী ছবি

হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ময়মনসিংহ সদর এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা রহমান (আগের নাম অর্পা শাহা)। সহপাঠীদের প্রচেষ্টায় তাকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে সেফ হাউজে পাঠানো হয়েছে।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ আমার সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সহপাঠী ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদরের ৭নং ওয়ার্ড, অমৃত বাবু রোড এলাকার গৌতম চন্দ্র সাহার কন্যা অর্পাসাহা জেলা জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। এফিডেভিটে তিনি নিজেকে প্রাপ্ত বয়স্কা ও কোন চাপ ছাড়াই নিজের ইচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

কিন্তু ধর্ম পরিবর্তনের পর ফাতেমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে পরিবারের সদস্যরা। ফলে গত ১০ ডিসেম্বর কোতয়ালী থানায় উপস্থিত হয়ে বাবা গৌতম চন্দ্র সাহা ও চাচা উত্তম চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে স্থানীয় এক মুসলিম পরিবারে আশ্রয় নেয়।

অন্যদিকে ফাতেমার বাবাও তাকে ফিরে পেতে থানায় আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে তাকে পরিবারের কাছে তুলে দেয় পুলিশ। ভবিষ্যতে নির্যাতন না করার এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনে সুযোগ দেয়া হবে মর্মে পুলিশের কাছে লিখিত দেয় ফাতেমার বাবা গৌতম চন্দ্র।

তবে বাসায় নিয়ে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। নির্যাতনের ঘটনা কৌশলে সহপাঠীদের জানায় ফাতেমা। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর তাকে উদ্ধারের জন্য আদালতে আবেদন করে সহপাঠী আশফিকা (মোকদ্দমা নং ১২৭/২০২২)। এর প্রেক্ষিতে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করে আদালত। তবে পুলিশ ব্যবস্থা না নিয়ে আবেদনটি ফেরত পাঠায়।

এরপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলে রোববার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দিয়ে ঘটনা অবহিত করে সহপাঠীরা। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম রাতেই ফাতেমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ফাতেমার জবানবন্দি শুনে সেফ হাউজে রাখার সিদ্ধান্ত দেয় আদালত।

কোতওয়ালী থানার ওসি শাহ কামাল আমার সংবাদকে বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর ফাতেমার ইচ্ছায় তাকে পরিবারের সদস্যদের হাতে দেয়া হয়। কিন্তু গতকাল রাতে ৯৯৯ কল দিয়ে নির্যাতনের কথা জানায় সহপাঠীরা। খবর পেয়ে মোবাইল টিমের মাধ্যমে ফাতেমাকে উদ্ধার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত তাকে সেফ হাউজে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফাতেমার বাবা গৌতম চন্দ্র সাহা আমার সংবাদকে বলেন, ‘তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তবে পরিবারের সদস্যরা আবেগতাড়িত হয়ে বকাঝকা করেছে। আমি চেয়েছিলাম যেহেতু তার বিবাহ হয়নি, এখন সে অনিরাপদ; তাই আমার কাছে থেকে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করুক। কিন্তু সে তাতে রাজি হয়নি। আদালতে নিজের জিম্মায় থাকার জন্য জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আদালত তাকে সেফ হাউজে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা আদলতের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।’

ফাতেমার আইনজীবি খন্দকার বদরুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতে উপস্থাপন করেছে। যেহেতু সে প্রাপ্ত বয়স্কা তাই নিজ জিম্মায় থাকার অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। আদালত নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে সেফ হাউজে রাখার আদেশ দিয়েছেন।’

তবে সহপাঠীদের অভিযোগ- ফাতেমাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কেএস