বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নতুন মেডিসিন ওয়ার্ডটিকে হাসপাতাল না বলে ভাগারখানা বলাই উত্তম হবে বলে মনে করেন রোগীদের পাশাপাশি বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। ব্যবহার বিধি না মেনে যত্রতত্র কফ, পানের পিক, থুথু ফেলে নতুন মেডিসিন ওয়ার্ডটির পরিবেশ দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। রোগীর সাথে আসা এটেনডেন্টরা মানছে না হাসপাতালের নিয়মকানুন। যত্রতত্র ময়লা ফেলে পুরো হাসপাতালটির পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
নতুন বছরের নতুন দিনে সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেল চরম বিশৃঙ্খলা পরিবেশ। নীচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সিঁড়ি, জানালার গ্রিল, দেয়াল এতোটাই অপরিচ্ছন্ন যে গাঁ ঘিনঘিন করে ওঠে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কোনাকাঞ্চিতে যত্রতত্র কফ, পানের পিক, ময়লা ও মরচের আস্তরণ। তৃতীয় তলার আইসিইউ লেখা কক্ষের প্রবেশপথেই পানি কাদা পার হয়ে প্রথমে কয়েকটি বেডে রোগীদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়ে কাজ চালাতে দেখা গেল। অথচ পশ্চিমে আইসিইউ বেড প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও তা তালাবদ্ধ। একইভাবে তালাবদ্ধ এখানের সব টয়লেট। প্রবেশপথেই দুটিমাত্র টয়লেট খুলে দেয়া হয়েছে তৃতীয় তলার প্রায় ২০০ এর মতো রোগীদের জন্য। মাথার উপর স্যানিটারি পাইপ ফেটে টুপুর টুপুর পানি পড়ছে। এইপানি পার হয়ে টয়লেটে ঢুকতে হয় রোগীদের।
রাব্বি, সুজন ও হানিফ নামের রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করলেন, গতকাল একদিনে এখানে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃতদেহ নিতে ট্রে চাইলেও এখানে টাকা গুনতে হয়েছে। নীচতলা তলা বাদে পাঁচতলা পর্যন্ত দুটো করে মোট আটটি টয়লেট রয়েছে প্রায় ২০০০ রোগীর জন্য। বেড নেই, এই শীতে ফ্লোরিং করতে হচ্ছে বেশিরভাগ রোগীদের। স্বজনদের দাবি, এখানের পরিবেশ এখন এমনই যে সুস্থ মানুষই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি এখানে এসে। তাহলে অসুস্থদের কি অবস্থা ভাবুনতো?
এখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের গেটে এতো এ্যাম্বুলেন্স কেন? প্রশ্ন তুলে রোগী দেখতে আসা একজন স্বজন ও বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বললেন, এই হাসপাতাল আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের গর্ব বলে আর বিশ্বাসই হয় না। দিন যত যাচ্ছে ততই এর শুধু অবনতিই ঘটছে। এটাকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দেয়া জরুরী বলে মন্তব্য করেন বরিশাল অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজান।
তিনি আরও বলেন, কঠোর প্রশাসক এবং দক্ষ জনবলের অভাবে এই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সেনাবাহিনীর কাউকে হাসপাতালের প্রধান হতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের নিয়মিত বদলী করাও জরুরী বলে মনে করেন তিনি। তার মতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা ইচ্ছামাফিক আসা যাওয়া করে এবং চাকুরীর শুরু এবং শেষ পর্যন্ত এখানেই থাকায় হাসপাতালের কোন কর্মকর্তাদের নির্দেশ তোয়াক্কা করেন না তারা। তার বক্তব্যের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বদলী বিষয়ে সহমত পোষণ করেন হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম।
তবে তিনি বিশৃঙ্খলা খুঁজে পাননি কোথাও। বলেন, নতুন ভবনতো। একটু সময় লাগবে সবকিছু গুছিয়ে নিতে। স্যানিটারি পাইপের বিষয়টি এখুনি দেখছি। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী বিষয়।
কেএস