করোনা মহামারীর সংকট কাটিয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মাধ্যমে গত অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে আয়কর আদায়ে সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বেশী।
বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান বলেছেন, এ অঞ্চলে আয়কর আদায়ের পরিমান বিগত বছরগুলোর তুলনায় যথেষ্ট ভাল এবং আশাব্যঞ্জক। তাই চলতি অর্থবছরে বিভাগের ছয় জেলা থেকে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বরিশাল কর অঞ্চল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০১-২০০২ অর্থবছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যদিয়ে বরিশাল কর অঞ্চলের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারীসহ করদাতাদের ইতিবাচক মনোভাবে বিগত ২০ বছরে তা সাড়ে ছয়শ’ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও মাত্র ২০ হাজার থেকে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ৯৩ হাজারে উন্নীত হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে ছিলো ৭৮ হাজারের কিছু বেশী। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলে করদাতার সংখ্যা লাখের অংকে পৌঁছবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টিআইএন ধারীর সংখ্যাও প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
সূত্রমতে, কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকার পাশাপশি কৃষি-অর্থনীতিই এখনো মূল চালিকা শক্তি। তবে গত দুই দশকে অন্যান্য ব্যবসা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হলেও করোনা সংকটের কারণে বিগত তিনটি অর্থবছরে সারাদেশের ন্যায় এ অঞ্চলেও অর্থনীতিতে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পরেছে। তারপরেও কর দাতাদের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বেশীরভাগ মাঝারী এবং বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বড় মাপের ব্যসায়ীরা আয়কর রিটার্ন ঢাকাতে জমা দিয়ে থাকেন। ফলে বরিশাল কর অঞ্চলের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। তবে আয়করের প্রতি ভীতি দূর করাসহ কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি মানুষের মধ্যে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একইসাথে করদাতাদের সাথে আরো সৌজন্যমূলক আচরণসহ কর প্রশাসনকে পরিপূর্ণ হয়রানি বিহীন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলারও তাগিদ দিয়েছেন করদাতারা। পাশাপাশি সাধারণ করদাতাদের পক্ষ থেকে যেকোন অসৎ উদ্দেশ্যে করদাতাদের ওপর ন্যূনতম বাড়তি চাঁপ প্রয়োগসহ হয়রানির বিষয়টি পরিহারের আহবান জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই কর প্রশাসন চলছে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে ১৩৯ টি গুরুত্বপূর্ণ পদই শূন্য। ২২টি সার্কেলের উপ-কমিশনারের পদে রয়েছেন মাত্র আটজন। যেকারণে একজন উপ-কমিশনারকে একাধিক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা সংকট তৈরী হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার পর্যন্ত সব পদেই জনবল সংকট চলছে। এমনকি তিনজন যুগ্ম কর কমিশনার পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র একজন। ২৯ পরিদর্শকের আটটি পদে কোন জনবল নেই।
অপরদিকে বরিশালে কর অফিসের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রায় দেড় যুগ ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খেয়ে সর্বশেষ প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ওই ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে তা সঠিক করে কেহই বলতে পারছেন না। ফলে বরিশাল মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা কর কমিশনারসহ বিভিন্ন সার্কেলের দপ্তরগুলোতে অনেক সময়ই কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে কারদাতারাও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে কর আহরণ প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর প্রদানে ইতিবাচক সাড়ার পরেছে।
তিনি আরও বলেন, কর দাতাদের ওপর কোন অনৈতিক চাঁপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এরপরেও যেকোন অনিয়মের ক্ষেত্রে সবসময়ই জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
জনবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি এনবিআরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কেএস