অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘বীর নিবাস’। এ উপজেলায় ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে তালিকাভুক্ত ৯ টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৩টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব বীর নিবাসে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে। সঠিক তদারকির অভাব ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে মাঝে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বীরনিবাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রতিটি বীর নিবাস হবে দৃষ্টিনন্দন ও ঢালাইয়ের পাকা ছাদ। এতে থাকবে তিনটি বেডরুম, একটি গেস্ট রুম, দুটি বাথরুম ও একটি কিচেন রুম, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সু-ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা।
সরজমিনে দেখা যায়, এ উপজেলায় বীর নিবাস নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট ও অন্যান্য উপকরণ। প্রাক্কলন অনুযায়ী টয়লেট ও রান্না ঘর সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি। নিম্নমানের পানির ট্যাংকি ও পাইপ লাগানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক সামগ্রী অখ্যাত কোম্পানির। নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণে নির্মিত বীর নিবাসগুলোতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বীর নিবাস বরাদ্দ পাওয়া একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের দাবি- শুরু থেকেই প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দিলেও, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাদের কথা আমলে নেননি। উল্টো তাদেরকে কাজ বন্ধ করে হুমকি দেয়া হয়। এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানানোর পর কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
উপজেলার সদর গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক খান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আমাকে বীর নিবাস দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। এসময় অভিযোগ করে তিনি জানান ঘরটি নির্মাণের শুরু থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের ইট, সুরকি, সিমেন্ট, রড় ব্যবহার করেছে। ছাদের রড ভালো দেয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুইচবোর্ড ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব বিষয় বার বার পিআইওকে অবগত করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
মইলাকান্দা ইউনিয়নের খোদ কালিহর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত উসমান গণির স্ত্রী জহুরা খাতুন দুঃখভরাকান্ত মনে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে নিয়ে ভাঙা একটি ঘরে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রী এখন ঘর দিয়েছেন, তবে এই ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারব কিনা জানি না। ঠিকাদার সব মালামাল খুব নিম্নমানের দিয়েছে। প্রশাসনের কাছে একবার মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর কয়েক মাস কাজ বন্ধ রেখেছিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিছু বললে উল্টো ধমক দিত।
পালান্দর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল মালেকের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেও মনে শান্তি নেই। ঠিকাদার নাম্বারবিহীন ইট-সুরকি ব্যবহার করেছে। সিমেন্ট দিয়েছে কম। অন্যান্য মালামাল ও উপকরণ নিম্নমানের। তাই আতঙ্কে আছি ঘরের ছাদ কখন মাথার উপর ধ্বসে পড়ে।
উল্লিখিত বীর নিবাস নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোজা ট্রেডার্স এর প্রতিনিধি আজিবুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে পরে দেখা করবেন বলে জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা পাপ্পু বলেন, ২য় ধাপের ১৩টি বীর নিবাস নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অনিয়মের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি, তবে যেসব ঘরের কাজে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হবে।
বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকলে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন।
এআরএস