শীতে চাঙ্গা কুমড়া বড়ির অর্থনীতি

শ্যামনগর ( সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম

শীতের মৌসুমে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। এটি একটি অনন্য খাবার মজাদার কুমড়া বড়ি। সাধারণত তরকারিতে এই কুমড়া বড়ি দেয়া হয়। এতে তরকারির স্বাদ ও মান বৃদ্ধি পায়।

চলমান শীতে কলারোয়ায় কুমড়া বড়ি তৈরী কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে গ্রামের অনেক নারীরা। কিছুকিছু স্থানে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন পুরুষরাও।

জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। বহু নারী কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। নিজেদের পরিবারের খাবারের জন্য এটি তৈরি করছেন। 
আবার কিছু কিছু এলাকায় বিক্রির জন্যও কুমড়া বড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আবার এই শীত মৌসুমে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে অনেক নারী ও পুরুষ কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন।

কুমড়া বড়ি তৈরি কাজে নিয়োজিত কয়েকজন নারী জানান, শীতকাল কুমড়া বড়ি তৈরীর ভরা মৌসুম। এ সময় প্রায় প্রতিটা বাড়িতে কমবেশি কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করাও হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরী করছেন। তারা জানান, কুমড়া বড়ি তৈরীর প্রধান উপকরণ কলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়া। এর সঙ্গে লবনসহ সামান্য মসলা। 
বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ডাল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা আর চাল কুমড়া ২৫থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসেবে চাল কুমড়া ৭০থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। প্রতি কেজি কলাই ডালের সঙ্গে তিনকেজির মতো কুমড়ার মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভালো হয়।

প্রথমে কলাই ডাল রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করা হয়। সেই ডাল পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাতভর অর্থাৎ প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে শিল-পাটায় সেই ডাল বাটা হয়। 
আর চাল কুমড়া পিচ করে কেটে কুড়নিতে ঘষে মিহি করা হয়। এরপর দুটির মিশ্রণ হাত দিয়ে ফেনিয়ে কুমড়া বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়। মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাঁদ বা খোলা জায়গায় পরিষ্কার কাপড় বা নেটে ভোর থেকে হাত দিয়ে বড়ি বসানো শুরু করা হয়।

পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানোর পর সেই বড়ি ৩ থেকে ৪ দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। বড়ি শুকিয়ে গেলে কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

তারা আরো বলেন, তবে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈররি মেশিনেও মাড়াই করে কলাই ডাল ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে।

পৌর সদরের সাজিদা বেগম ও সালমা খাতুন জানান, তিনকেজি কুমড়ার সঙ্গে এককেজি কলাইয়ের ডাল মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভালো তৈরি হয়।
এখন বাজারে খোসা ছাড়ানো কলাই ডাল পাওয়া যায়। ডাল ভালো হলে বড়ির স্বাদও ভালো হয়। এছাড়াও অনেকে কুমড়া বড়ির সঙ্গে পেঁয়াজ মিশ্রন দিয়ে থাকেন। প্রতি কেজি ডালের হিসেবে কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারিশ্রমিক হিসেবে একশ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

সবমিলিয়ে প্রতি কেজি ডালের হিসেবে কুমড়া বড়ি তৈরি করতে আনুমানিক ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ৩’শ টাকার উপরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

অনেকে জানান, কুমড়া বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক উপাদান। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা। শীত মৌসুমে কুমড়া বড়ি তৈরী করে অনেক নারীদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হচ্ছে।

তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

এআরএস