আলুর ভালো ফলন-ন্যায্যমূল্যে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

নওগাঁ প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম

নওগাঁর মাঠে মাঠে আলুর বাম্পার ফলনের আশায় আলুচাষিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৈরি আবহাওয়ার কবলে না পড়লে এবার আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন এবং স্বপ্ন বুনছেন জেলার কয়টি উপজেলার চাষিরা।

উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ন্যায্যদামও পাওয়ার আশা তাদের। গত মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হলেও দাম কিছুটা কম হওয়াতে ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা।

পাশাপাশি আলু স্টোর করে চরম লোকসান গুণতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। আগের সব দুঃখ ভুলে চলতি বছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে নতুন করে আলু চাষ করেছেন নওগাঁর চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছর ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত উপশি জাতের কাটিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যারিস্টরি জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ষাইটা, লাল ও সাদা পাপড়ি আলু চাষ হয়েছে।

এরমধ্যে মান্দা উপজেলায় ৪ হাজার ৩শ হেক্টর, সদরে দুই হাজার ৫২০ হেক্টর, বদলগাছী তিন হাজার ১০ হেক্টর, রানীনগর এক হাজার ৩৮ হেক্টর, আত্রাইয়ে দুই হাজার ৮শ হেক্টর, মহাদেবপুরে এক হাজার ৩৬০ হেক্টর, পত্নীতলায় এক হাজার ৮৭০ হেক্টর, ধামইরহাটে দুই হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। 

গত বছর চাষ হয়েছিল ২১ হাজার ৫০০  হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলু ক্ষেতে ভাইরাস নেই বললেই চলে। তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষককে। যে কারণে বাম্পার ফলনে চাষিরা অনেকটা আশাবাদী।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার নিয়ামতপুর, মান্দা ও আত্রাই  উপজেলার মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যাবে সেদিকে শুধু দেখা যাবে আলুর ক্ষেত। গাছ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন।

তবে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলনের সময় কাঙিক্ষত দাম পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন আলুচাষিরা।

নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুর ইউনিয়নের ছাতমা গ্রামের রুবেল হোসেন জানান, চলতি বছর ৩০ বিঘা জমি চাষ করেছি। আলু ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন গেলেই এসব জমি থেকে আলু তোলা হবে। ইতোমধ্যে আগাম জাতের কিছু কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি।

তবে সেখানে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দেওয়ায় আমাদের মতো ছোট চাষিদের তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছিনা।
মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের আইওরপাড়া গ্রামের আলুচাষি নজরুল ইসলাম  জানান, আমি ৬ বিঘা জমি চাষ করেছি। গাছ খুব ভালো হয়েছে। সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। চলতি বছর বেড়েছে সার, কীটনাশকের ও শ্রমের ব্যয়।

নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতমা গ্রামের আলুচাষি রুবেল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও মোজাহার  হোসেন বলেন, গতবছর শুরুতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও শেষের দিকে দাম কমে গিয়েছিল। তবে এ মৌসুমে আলু চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

ইতোমধ্যে উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা অতীতের ন্যায় কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তারা আরও বলেন, একবিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ আলু হয়। বর্তমানে আলুর দাম এক হাজার থেকে ১২শ টাকা। আলু যখন উঠানোর সময় হয় তখন আমরা দাম পায় ৪শ থেকে ৫শ টাকা। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এজন্য চাষকে লাভজনক করে তুলতে আলুর দাম বৃদ্ধি করার দাবি জানান তারা।

জেলা কৃষি উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, কৃষিবিভাগের একান্ত প্রচেষ্টায় চলতি বছর আলু ক্ষেতকে রোগ বালাইমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জেলার কোথাও আলুর ফলন বিপর্যয় হয়নি। আশা করা যাচ্ছে সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।

এআরএস