কুষ্টিয়ার মোকামে প্রতারণা

শতাধিক জাতের ধান আবাদ হলেও চাল মাত্র সাত ধরনের

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০৪:৫৩ পিএম

কুষ্টিয়ার খাজানগর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। দেশে চালের চাহিদার বড় অংশ এই মোকাম থেকে সরবরাহ হয়। মোকামে সারাবছর সাত ধরনের চাল বস্তাজাত করে বাজারে ছাড়েন মিল মালিকরা। অথচ কুষ্টিয়া অঞ্চলের ৪৩ ধরনসহ সারাদেশে ধান আবাদ হচ্ছে শতাধিক জাতের। কুষ্টিয়া ছাড়াও এই মোকামে সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, রংপুর, নওগাঁ, দিনাজপুর থেকেও ধান আসে। তা থেকে মিল মালিকরা চাল তৈরি করে বিক্রি করেন।

খাজানগর মোকামে বস্তাজাত হয় বাসমতী, মিনিকেট, স্পেশাল মিনিকেট, আটাশ, স্পেশাল আটাশ, কাজললতা ও গুটি স্বর্ণা চাল। এসব চাল কোন জাতের ধান থেকে তৈরি, তা গোপন রাখেন মিল মালিকরা। এভাবে তাঁরা প্রতারণা করছেন। কম দামে ধান কিনে আটাশ, কাজল লতা ও মিনিকেটের লোগো ব্যবহার করে অনেক বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন তারা।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে একটি জরিপ হয়। জরিপের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে ‍‍`মিনিকেট‍‍` নাম দিয়ে কীভাবে মিল মালিকরা প্রতারণা করছেন, তা তুলে ধরা হয়।

কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে মোটা ধান আবাদ হয় ১ লাখ ৫২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। এর মধ্যে চিকন ধানের আবাদ হয় ২৩ শতাংশ জমিতে। চিকন ধানের মধ্যে আছে বিআর ২৬, ব্রি ধান ৩৯, ব্রি-ধান ৫০, ব্রি-ধান ৬০, ব্রি ধান ৬৩, ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৬, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ১০০, বিনা ধান ১৭ এবং বিনা ধান ১৯। এসব ধানের চাল বাজারে মিনিকেট, নাজিরশাইল, বাসমতী ও সুপার মিনিকেট নামে বিক্রি করেন মিল মালিকরা।

কৃষি বিভাগ, বিএডিসি, বীজ ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা জানান, ব্রি ধান ৫৮, ২৮, ২৯, ৭, ৩৯, ১৭, ২০, ২২, ৮৭, ৫০, ৮১ ও ১০০, ১৭, ৬৩, ৭৫ ও ১৯ জাতের ধান চিকন ও সরু। এসব ধান থেকেই চাল তৈরি করে ‍‍`মিনিকেট‍‍` নামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ জাতের ব্রি ধানকে ‍‍`বাসমতি‍‍` বলে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ব্রি ধান ৬৩ জিঙ্ক সমৃদ্ধ। পাশাপাশি ব্রি ধান ৩৩, ১৬, ৫১, ৫২, ১০, ১১, ২২ ও ২৩ জাতের ধান মোটা।

অন্যদিকে ব্রি ধান ৮৫, ৫৮, ৮৯, ৯২, ৯৩, ৬২, ৮০, ৭১, ৮৬ ও ৮৮ জাতের ধান মাঝারি। এর মধ্যে চিকন বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি ধানও আছে। এ ছাড়া ব্রি ধান ৩৪ জাতকে ‍‍`বাদশা ভোগ‍‍` বলে বিক্রি করা হয়, যা পোলাওর চাল হিসেবে প্রচলিত।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ৫১ ও ৯৩ জাতের ধান থেকে ‍‍`কাজললতা‍‍` চাল তৈরি করছেন মিল মালিকরা। তারা মিনিকেটের বস্তায় ২৮ চাল মিশিয়ে বিক্রি করেন। ‍‍`স্পেশাল বা সুপার ২৮‍‍` নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা মাঝারি মানের ধান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা।

চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও একটি অটো রাইস মিলের মালিক জয়নাল আবেদিন ধানের জাত ও চালের নামের প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ধানের সব জাত সম্বন্ধে তার জানা নেই। কম দামে ধান কিনে চাল তৈরি করে মিশিয়ে বিক্রির ফলে বেশি লাভ করছেন তারা।

বিএডিসির উপপরিচালক (বীজ) আব্দুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ায় তারা ৪০ ধরনের বেশি জাতের ধান বিক্রির জন্য ডিলারদের সরবরাহ করে থাকেন। মিল মালিকরা তা থেকে ‍‍`কাল্পনিক‍‍` নাম দিয়ে মাত্র সাত ধরনের চাল তৈরি করেন।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, মিল মালিকরা জেনে শুনেই প্রতারণা করছেন। আইন না থাকায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। সরকার নতুন আইন করতে যাচ্ছে। আইনটি হলে ধানের জাতের নামে চাল বিক্রি করতে হবে।

কেএস