দেশের সর্বদক্ষিণের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত সাগরকন্যা কুয়াকাটায় মানসিক ভারসাম্যহীন পাগল আর ভিক্ষুকের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পর্যটকরা।
প্রতিদিন এখানে আগত পর্যটকদের সামনে পাগলের আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি ও আকস্মিক পাগলামি এবং ভিক্ষার জন্য পর্যটকদের পরিধীয় পোষাক ধরে ভিক্ষুকদের টানাটানির ঘটনায় প্রতিনিয়ত পর্যটকরা হচ্ছেন বিব্রত। তেমনি পরিবারের সদস্যদের সাথে বেড়াতে আসা শিশুরা পাগলের পাগলামিতে ভয়ে আতংকিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিচ এলাকা, খাবারের হোটেল এবং আবাসিক হোটেলের সামনেসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দিনে-রাতে বিভিন্ন বেশের অসংখ্য নারী ও পুরুষ পাগল আপত্তিকর পোষাকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনের বেলায় এসব মানসিক ভারসাম্যহীন পাগল বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ালেও রাতে আবাসিক কিংবা খাবারের হোটেলগুলোর সামনে এসে তারা পাগলামি করছে। যেকারণে পর্যটকদের মনে ভীতি তৈরি হচ্ছে।
অপরদিকে ভিক্ষার জন্য সৈকতের বিভিন্নস্থানে পর্যটকদের পরিধেয় পোষাক ধরে টানাটানি করছে অসংখ্য ভিক্ষুক। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে অসংখ্য পাগল ও ভিক্ষুক রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই বহিরাগত। যাদেরকে স্থানীয়ভাবে কেউ চিনেন না। এছাড়া তারা কোথা থেকে এখানে আসছে তাও কেউ বলতে পারছেনা। অপরদিকে সমুদ্র সৈকতের প্রধান বিচ পয়েন্টে কথিত এক পাগলকে দিয়ে কতিপয় ব্যক্তি গাঁজা বিক্রি করাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পাগল আর ভিক্ষুকের উপদ্রবের সত্যতা নিশ্চিত করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় পর্যটকদের কাছে গিয়ে পাগল অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ফলে ভয়ে আতংকিত হচ্ছেন পর্যটক ও তাদের সাথে আসা শিশুরা। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক তারেক মাহমুদ আলী, রনি, জিএম জসিম হাসান বলেন, প্রতিদিন দেশ ও বিদেশের অসংখ্য পর্যটক ছুটি কাটিয়ে মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য পরিবারের সদস্য কিংবা স্বজনদের নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসেন। তারা আরও বলেন, সম্প্রতি সময়ে কুয়াকাটায় পাগল আর ভিক্ষুকের উপদ্রবে পর্যটকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরতে শুরু করেছে। সমুদ্র সৈকত থেকে ভিক্ষুকদের সরিয়ে নিয়ে পূর্নঃবাসন এবং পাগলদের মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোরদাবি করেছেন।
কলাপাড়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, কথিত এক পাগলকে দিয়ে গাঁজা বিক্রি করানোর অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটাকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাই কোন অবস্থাতেই পর্যটন কেন্দ্রে আগত পর্যটকদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সে কাজ করতে দেওয়া হবেনা।
তিনি আরও বলেন, ভিক্ষুক মুক্ত করতে সরকারের মহতি উদ্যোগ কুয়াকাটায় বাস্তবায়িত হলেও এ পর্যটন কেন্দ্রে বহিরাগত ভিক্ষুকদের আনাগোনা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ভিক্ষুকদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তাদের পূর্নঃবাসন এবং পাগলদের মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করা যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পাগল আর ভিক্ষুকের উপদ্রবে পর্যটকরা অতিষ্ঠের বিষয়ে এতোদিন কেউ আমাকে অবহিত করেননি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পর্যটকদের সবধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরএস