বরিশালে এক রাতে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারা সম্পর্কে নাত বউ ও দাদী শাশুড়ি। মৃতদ্বয়ের স্বজন অপর এক নারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুরে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড বলে মনে হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
মৃতদের স্বজন ও স্থানীয়রা বলছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে খাবারের সাথে বিষাক্তদ্রব্য মিশ্রন করে এদের কিছু খাওয়ানো হয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য চুরির মতো একটি ঘটনার রুপ দেয়ার চেষ্টা করেছে দৃর্বৃত্তরা। যদিও এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি। মৃত লালমুন নেছা (১০২) বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) দেলোয়ার হোসেনের মা। অপর মৃত রিপা আক্তার (২০) দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোলায়ামান এর স্ত্রী। এছাড়া গুরুত্বর অসুস্থ মিনার বেগম (৫৫) কে স্থানীয় বাহেরচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম বলেন, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ থেকে দেড়শত গজ দূরে ঘটনাস্থল। খবর পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেয়ার পর লালমুন নেছা ও রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষনা করা হয়। আর মিনারা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী টয়লেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোন উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্স লাইট আনতে যান। এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়াল ঘরের দিকে যান। সেখানে গিয়ে গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন সারাশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন। পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়।
এদিকে কেদারপূর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন ভূতেরদিয়া এলাকার এই ঘটনা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আশপাশের লোকজনও ভিড় করেছেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশের দফাদার মোঃ হানিফ বলেন, গত রাতে এ বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলে বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। কেউ সন্দেহ করছে চুরির জন্য খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে এই পরিবারের তিনজনকে অচেতন করা হয়েছিলো। আর সেই বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, বাকী একজন অচেতন হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়। তবে সার্বিক আলামত দেখে চুরির জন্য নয়, হত্যাকাণ্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে তাও সন্দেহ করছেন অনেকে।
তিনি জানান, ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদ কাটা হয়েছে, তবে সেটি দিয়ে কোন মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্ণালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে। এক্ষেত্রে চুরি হলে আরও অনেক মালামালই তো খোয়া যেতো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সঠিক কারন নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
কেএস