জনবল সংকটে চমেক

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম

প্রায় সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও জনবল সংকটে শতভাগ চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যর্থ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)।

জানা যায়, গত দুই বছর অর্থাৎ ২০২১ ও ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর হার বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। বড় অপারেশনের হার বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছোট অপারেশনের হার বেড়েছে ২৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বর্হিবিভাগে রোগীর হার বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগে রোগী বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কিন্তু সে অনুপাতে হাসপাতালে লোকবল রয়েছে ২ হাজার ১৯ জন। অর্থাৎ ২ হাজার ১৯ জন লোকবল দিয়ে চলছে ২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতাল। যেখানে এক শয্যার বিপরীতে লোকবলের প্রয়োজন ছিল আরও চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। তারমধ্যেও পাঁচশো শয্যার বিপরীতে থাকা লোকবলেও ঘাটতি রয়েছে।  

চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ৩৬০টি আর লোকবল রয়েছে ৩৩০ জন। পদ খালি রয়েছে ৩০টি যা ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দন্ত চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ২৪টি। লোকবল আছে ২০টি। এখনো চার জন দন্ত চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। যা শতকরায় ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। নার্সের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১ হাজার ২৫৩টি। আর হাসপাতালে নার্স রয়েছে ১ হাজার ২০১ জন। আরও ৫২ জন নার্সের ঘাটতি রয়েছে হাসপাতালটিতে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে ৪৪টি কিন্তু লোকবল রয়েছে ৩৩টিতে। আরও ২৫ শতাংশ বা ১১টি পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য অনুমোদিত ৫৬৫টি পদের মধ্যে ১৮৫টি শূন্য রয়েছে।

এছাড়াও প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদের অনুমোদিত পদসংখ্যা ২৪৮টি। কিন্তু শূন্যপদ রয়েছে ১৯৩টি। তারমধ্যে অফিস সহায়কের পদ খালি রয়েছে ১১৭টি ও ক্লিনারের ২২টি। অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামের সরকারি এ হাসপাতালের পদ খালি রয়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২১ সালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৯১২ জন। প্রতিমাসে ১৭ হাজার ৪৯৩ জন। ২০২২ সালে সে হার ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয় ২ লাখ ৪৭ হাজার ১২২ জন। আর প্রতি মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫৯৪ জন। ২০২১ সালে বড় অপারেশন করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪২৫টি। প্রতি মাসে অপারেশন হয় ১ হাজার ২৮৫টি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বড় অপারেশনের হার ৭৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৪৯২টি। যা প্রতি মাসে গড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৯১টিতে।

একইভাবে ২০২১ সালে চমেকে ছোট অপারেশন হয় ১৯ হাজার ১৪৪টি। প্রতি মাসে ছোট অপারেশন হয় ১ হাজার ৫৯৫টি। এর পরের বছর ২০২২ সালে ছোট অপারেশনের হার বেড়েছে ২৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ যা সংখ্যায় ৬৩ হাজার ৭৪২টি। প্রতি মাসে ছোট অপারেশনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩১২ জনে। গত দুই বছরে ভর্তি রোগীর পাশাপাশি বর্হিবিভাগেও বেড়েছে রোগীর হার। ২০২১ সালে বর্হিবিভাগে রোগী ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৯৮৯ জন। প্রতিমাসে ৫০ হাজার ৭৪৯ জন রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয়। পরের বছর ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ রোগীর হার বেড়ে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয় ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৮ জন।

প্রতি মাসে যা ছিল ৭০ হাজার ৫৩০ জনে। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগেও রোগী বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২১ সালে জরুরি বিভাগে রোগী ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯২২ জন। যা প্রতি মাসে ১৯ হাজার ৯৯৩ জন রোগী। ২০২২ সালে সে সংখ্যা প্রতি মাসে ২৪ হাজার ৪৮২ জন করে বছরে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ জন।

অন্যদিকে, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৬৮৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে প্রতিদিন ২ হাজার ৩৫১ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয় প্রতিদিন ৮১৬ জন করে। তারমধ্যে প্রতিদিন বড় অপারেশন করা হয়েছে ৭৬ জন রোগীর এবং ছোট অপারেশন করা হয়েছে ১৭৭ জনের।

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান  বলেন, পাঁচশো শয্যার জনবল দিয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়াটা কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য। তারপরেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আরও চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী নিয়োগ দিতে হলে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। আমরা একটি নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি রয়েছে বেশি। এরপরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ঘাটতি রয়েছে। এখন যে শর্টেজ আছে সেটা আমাদের পাঁচশো শয্যার জনবলের হিসেবে। এখন আমাদের হাসপাতাল ২২শ’ শয্যার অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। বিষয়গুলো আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এর বাইরে আমরা চাইছি যে আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির যেসকল কর্মচারীরা আছেন তারা যদি প্রশিক্ষিত হয় তাহলে হাসপাতালের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে। আমরা আরও উন্নত সেবা দিতে পারবো রোগীদের।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম শহরের কেবি ফজলুল কাদের রোড অর্থাৎ বর্তমান ঠিকানায় এটি স্থানান্তরিত হয়। যেখানে শুরুতে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ১২০। পরবর্তীতে হাসপাতালটিকে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায়, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যায়, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩১৩ শয্যায় এবং ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

কেএম