ভয়ংকর হয়ে উঠছে বালিয়াকান্দির গ্রামীন সড়ক

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩, ০৪:৫৯ পিএম

ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলার গ্রামীন সড়কগুলো। অদক্ষ চালকের হাতে ইটভাটার অবৈধ মাটিটানা ট্রাক্টরে গত দুই মাসেই একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দিনভর দাপিয়ে বেড়ানো অতিরিক্ত বোঝাই ড্রাম ট্রাক গুলোর ফলে পাকা সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সড়ক মেরামতেই প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি ব্যয় হচ্ছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অদক্ষ চালকের হাতে থাকা অবৈধ ট্রাকগুলো নিয়ন্ত্রণের দাবি সুধীমহলের। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানাসহ আইন বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে দাবি প্রশাসনের।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর নারুয়া মধুপুরের মোড়ে অবৈধ ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় আব্দুল মজিদ মোল্যা (৫০) নামে একজন নিহত হয়। এর দুইদিন পর গাড়াকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফ (৭) ট্রাক্টরের নিচে পড়ে প্রান হারায়। রাস্তায় মাটিপড়ে এবড়োথেবড়ো সড়কে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গত ১০ জানুয়ারি সদর ইউনিয়নের ইরশালবাড়ী গ্রামের সুনীল বিশ্বাস মারা যায়। এর ১১ দিন পর ২১ জানুয়ারি নবাবপুর ইউনিয়নের বকশিয়াবাড়ীতে সানজিদা (৫) নামক শিশু ট্রাক্টর চাপায় নিহত। সড়কে প্রাণহানীর পাশাপাশি সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা দৈনন্দিন।

ইটভাটা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১২টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটার মালিকানায় এবং ভাড়ার ৫-১০টি ট্রাক্টর-ড্রাম ট্রাক রয়েছে। যেসব গাড়িগুলো বিভিন্ন মাঠ থেকে মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করে। কাঠখড়িসহ নানা ধরনের সামগ্রী পরিবহনে কাজে লাগায় মালিকরা। যা প্রতিদিন একাধিক ট্রিপ দিয়ে থাকে। কৃষি কাজের জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ট্রাক্টর স্থানীয়ভাবে বডি তৈরি করে অবৈধ ট্রাকে রুপান্তর করা হয়। এসব গাড়ী চালনার জন্য নসিমন, করিমন ও ভ্যানচালকদের বেছে নেয়া হয়। যারা কোন প্রকার গাড়ী চালানো সম্পর্কে বিধিবিধান জানেনই না। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সাথে গাড়ী মালিকরা স্থানীয়ভাবে মোটা অংকে দফারফা করেন বিধায় বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না তাদের।

স্থানীয়রা জানান, মাটিবাহনের ট্রাক্টর শুধু সড়কই ক্ষতি করছে না, রীতিমতো জীবন ঝুকির মধ্যে ফেলেছে। গ্রামের সব ধরনের রাস্তায় একের পর এক ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক চলাচলে সড়কে খানাখন্দে ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোও ধুলোবালিতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে।  

ইটভাটার একাধিক ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, মাটি পরিবহনে ট্রাক্টর চালানোর জন্য দক্ষ ড্রাইভার রাখলে মালিকদের বেশি অর্থ দিতে হয়। ফলে নসিমন, করিমন চালকদের বেছে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে বয়স কম হলে পারিশ্রমিকের পরিমানও কমে যায় বলে তারা জানান।

বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার রাহাত ফেরদৌস বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলায় প্রায় একশো কিলোমিটার গ্রামীন পাকা সড়ক রয়েছে। বালুবাহী ড্রাম ট্রাক সড়ক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও মাটির ট্রাক থেকে সড়কে মাটিপড়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিসহ সড়কের স্থায়ীত্ব কমে যাচ্ছে। এতে করে শুধুমাত্র সড়ক রক্ষনাবেক্ষনেই প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, বালিয়াকান্দি প্রশাসন অবৈধ গাড়ী, লাইসেন্স বিহীন চালক, অতিরিক্ত ওজন বাহী ট্রাকসহ সড়ক নিরাপদ করতে চেষ্টা করছে। অদক্ষ ড্রাইভার ও ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। লাইসেন্স বিহীন ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হচ্ছে না। অভিযানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানান।

কেএস