নদী বেষ্টিত নাগেশ্বরীর চরঞ্চলগুলো ঢেকে গেছে ভুট্টার সবুজ পাতায় পাতায়। চারিদিকে ভুট্টা আর ভুট্টায় যেন সবুজের সমারোহ। ক'দিন পর ভুট্টার গাছে গাছে শোভা পাবে দানায় দানায় ঠাসা ভুট্টার ছড়ি। সে ছড়িতেই সোনালী স্বপ্ন দেখছে উপজেলার নাগেশ্বরী পৌরসভা, কালীগঞ্জ, কচাকাটা, নুনখাওয়া, নারায়নপুর, কচাকাটাসহ আশপাশের ভুট্টা চাষিরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে, প্রতিবারই এসব জমিতে ধান, গম, সরিষা, তিষি, পাট, আঁখ ইত্যাদি ফসল চাষ করলেও অল্প সময় সল্প পুঁজি আর তুলনামূলক অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের হবে এমন আশায় বন্যা পরবর্তীতে উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর জেগে ওঠা পলিযুক্ত চরাঞ্চলে নিজস্ব পৃষ্ঠপোষকতায় ভূট্টা চাষাবাদ করছেন তারা।
চরাঞ্চলীয় এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভূট্টা ক্ষেতের বিস্তির্ণ মাঠ জুরে সবুজ চাঁদর বিছিয়ে দিয়েছে প্রকৃতিতে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ক্ষেতে ঠিকমতো সেচ, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ সুষ্ঠু পরিচর্যা করে আসছেন নিয়মিত। কম খরচে অল্প পরিচর্যায় বেড়ে উঠা এ শস্যটি বিঘা প্রতি ফলন হয় ৩০ মণের উপরে। মণ প্রতি বিক্রি হয় ১২শ থেকে ১৪শ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের নারায়নপুর ইউনিয়নের কালারচরের আইনুল হক জানায়, তিনি প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ করেন। এ বছরও চাষ করেছেন প্রায় ৮ বিঘা জমিতে। ভূট্টার গাছে গাছে ফুলের কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। ফলন ভালো হবার আশা করছেন তিনি। এছাড়াও নামারচর এলাকার জাবেদ আলী চাষকরেছেন ৩ বিঘা জমিতে। মাঝের চরের জয়নাল মিয়া চাষ রেছেন ২ একর, পাখি উড়ার চরের রহমত আলী চাষ করছে ১০ বিঘা।
এছাড়াও ভূট্টা চাষের আবাদী জমি সম্প্রসারিত হচ্ছে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ি, চর কাপনা ও নুনখাওয়া ইউনিয়নের বাহুবল এলাকসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে। এদের কেউ জমি বরগা নিয়ে আবার কেউ লিজ নিয়ে মিরাকেল, ডন, টাইগার, সুপার শাইন ইত্যাদি জাতের ভূট্টা চাষ শুরু করেছে। প্রতি একরে বীজ লেগেছে ২ কেজি। বর্তমানে গাছগুলো বেশ হৃষ্ট-পুষ্ঠ ও তরতাজা বলে ফলন ভালো হওয়ার আশা তাদের। তবে দাম ভালো পেলে ভূট্টা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন বলেও জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৪শ ৪০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৪শ ১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিএডিসি থেকে সরবরাহকৃত ভূট্টা উপজেলার ৭৫০ জন কৃষকের প্রত্যেককে ২ কেজি ভুট্টা, ২০ কেজি ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার হোসেন জানান, উপজেলার দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্র, সঙ্কোশ নদ-নদীর চরাঞ্চলে কৃষকরা বেশ উৎসাহের সাথে ভূট্টা চাষ করছে। তাই কীভাবে এর ফলন ভালো হয়ে তারা লাভবান হয় সেদিকটা লক্ষ্য রেখে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কেএস