ট্রলার ডুবিতে ৬ বছর আগে নিখোঁজ রাশেদ বাড়ি ফিরলেন

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি  প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০১:০০ পিএম

নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ২০ জন জেলের সঙ্গে ৬ বছর আগে ২০১৭ সালে ইলিশ মাছ ধরতে সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন মোঃ রাশেদ (২৮)। বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ে সেই ট্রলার ডুবিতে সবার সঙ্গে নিখোঁজ হন তিনিও।

কিছুদিন পর ভারতে ট্রলার মিললেও ভেতরে ৬ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে তখনও সন্ধান মেলেনি রাশেদের। এছাড়াও দীর্ঘ ৬ বছর সেই ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ১৪ জনের খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার ধরেই নিয়েছিলেন তারা হয়তো বেঁচে নেই।

তবে গেল বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন রাশেদ। যদিও ফিরে আসার পর কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি, কেবলই তাকিয়ে আছেন। রাশেদ নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৬নং আদর্শ গ্রামের কালাম হুজুরের বাড়ির আবুল কালাম ও হালিমা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জাফর সারেংয়ের সঙ্গে মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে যান রাশেদসহ ২০ জন জেলে। ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২০ জেলের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুদিন পর ভারতীয়রা ট্রলার উদ্ধার করলেও ৬ জনের মরদেহ ট্রলারের ভেতরে খুঁজে পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘ ৬ বছরে বাকি নিখোঁজ ১৪ জনের খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার ধরেই নিয়েছিলেন তারা হয়তো বেঁচে নেই। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে ফিরে আসেন রাশেদ। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছেন না তিনি। এ সময় রাশেদের বাবা আবুল কালাম জন্মগত দাগ দেখে নিশ্চিত করেন। রাশেদকে ফিরে পেয়ে তার মা, ভাই-বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরিবারের লোকজন জানান, বিয়ের ৩ মাস ১০ দিনের মাথায় রাশেদের ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ ৬ বছর ১ মাস ৭ দিন পর সে বাড়িতে এসেছে। সে কথা না বলতে পারলেও আমরা তাকে চিনেছি।

রাশেদের মা বলেন, ছেলের জন্য মোনাজাতে কান্না করতে করতে আমি প্রায় অন্ধ হয়ে গেছি। তাও সন্তানের খোঁজ পাইনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম, আল্লাহ আমার সন্তান বেঁচে থাকলে আমাকে এক নজর দেখাইয়েন। আজকে আমার সন্তান আমার বুকে আসছে। আমি আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করছি।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাশেদকে ফিরে পেয়ে পরিবারটি আনন্দে আত্মহারা। এলাকাবাসী এক নজর রাশেদকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। সে এতদিন কোথায় ছিল তা জানা যায়নি। তবে আশা করছি সে স্বাভাবিক হলে সব জানা যাবে।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, সন্তান ফিরে আসা যেকোনো পরিবারের জন্য আনন্দের। আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি আপনার কাছ থেকে মাত্র শুনলাম। আমার আজকে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে যাওয়ার কথা রয়েছে। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। 

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, অনেক সময় জেলেরা বেতারবার্তায় যখন ঝড়ের আভাস পান, তখন আর তারা তীরে ফেরার সুযোগ পান না। মারা যান অনেকেই। দাফনের ভাগ্যও জোটে না। তাদের স্ত্রী-সন্তানরা তীরে তাদের অপেক্ষা করে দিন কাটায়। সাগরের বিশাল ঢেউয়ের শব্দে চাপা পড়ে যায় তাদের কান্না। 

কেএস