সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমে উঠেছে ক্ষিরার মৌসুমি হাট। এ অঞ্চলের ক্ষিরার চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই। এদিকে ক্ষিরার দাম ভাল পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। ফলে কৃষকের মুখে এখন হাসি।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪৩৯ হেক্টর জমিতে ক্ষিরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি। প্রতিদিন ক্ষিরাকে কেন্দ্র করে তাড়াশ উপজেলার দিঘরীয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে খিরার মৌসুমি হাট। এ হাটে প্রতিদিন ঢাকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে ক্ষিরা কিনে নিয়ে যান।
জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার কোহিত, সড়াবাড়ি, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘুরিয়া, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, তেঁতুলিয়া, ক্ষীরপোতা, বরগ্রাম,বিশাল সবুজের সমারোহ মাঠের পর মাঠ ক্ষীরার আবাদ হয়েছে। ক্ষীরা বিক্রি করার জন্য দিঘরীয়া এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে আড়ৎ। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা ক্ষীরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ৎ থেকে নিজ জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ক্ষিরা কিনতে আসেন।
প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন ক্ষীরা বেচা-কেনা হচ্ছে। দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড। পরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক যোগে চলে যায়। এবার এই আড়ৎগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন ক্ষীরা যাচ্ছে ঢাকায়।
মাধাইনগর ইউনিয়নের ক্ষীরপোতা গ্রামের ক্ষীরা চাষি আব্দুল মতিন বলেন, গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার কারণে খুব একটা লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভাল পেয়েছি।
বারুহাস ইউনিয়নের দিঘড়িয়া গ্রামের বর্গা চাষী কৃষক ফজর আলী বলেন, গত বছর ১৫ শতাংশ জমির ক্ষীরা বিক্রি করে বেশ লাভ হয়েছিল। এবারও ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ক্ষীরার চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।
একই ইউনিয়নের সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি তিন বছর ধরে ক্ষীরার চাষ করে আসছি। আগে এই আবাদ কম হতো। কিন্তু অন্যান্য ফসলের চেয়ে ক্ষীরা চাষে অধিক লাভের কারণে প্রতি বছর কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার দিঘরীয়া গ্রামে কৃষক মজনু বলেন, ধান চাষের পাশাপাশি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ মণ করে ক্ষিরার ফলন হবে। বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা ক্ষিরা ১১০০/১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এ রকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।
বারুহাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মাসুদ রানা জানান, দিঘরিয়া আড়ৎ থেকে বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে ক্ষিরা কিনতে আসেন। এলাকার ক্ষিরা সাধারণত ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন ক্ষিরা বেচা-কেনা হচ্ছে। তাড়াশে উৎপাদিত ক্ষিরা যাচ্ছে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ মে. টন ক্ষিরা যাচ্ছে শুধু রাজধানী ঢাকায়।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার ফসলী জমিতে ক্ষিরা চাষ খুব ভালো হয়। কৃষি অফিসের লোকজন সার্বক্ষণিক কৃষকদেরকে ক্ষিরা চাষে উৎসাহ ও পরার্মশ দিয়ে সহযোগীতা করে আসছেন। ক্ষিরা চাষে কৃষকরা অন্যান্য কৃষি দ্রব্যের তুলনায় ভাল লাভবান হতে পারেন।
কেএস