গাংনীর টমেটো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে

মো. সাইদ হাসান প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ১১:২২ এএম

মেহেরপুরের গাংনী থেকে ১০০ টন টমেটো বিদেশে রপ্তানি করা হবে। টমেটো বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে চলতি বছর কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে চাষীরা ক্ষেত থেকে  তালিকাভুক্ত চাষীরা উপজেলা কৃষি বিভাগের তদারকিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সবজি উৎপাদন শুরু করেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে খরিপ চলতি বছর ৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে টমেটোর দাম কমে যাওয়ার মুহূর্তে বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক।

ঢাকার ফারমার্স এগ্রো প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান গাংনী থেকে কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদেশে টমেটো রপ্তানি কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে । টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ সবজির গুণগত মান ঠিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজযোগে সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দুই মাসে ৬০ টন টমেটোর চালান মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে সৌদি আরব ও তাইওয়ানে সবজি পাঠানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ফারমার্স এগ্রো প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ফিরোজ আল মামুন।

কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে বিদেশে টমেটো রপ্তানি শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে গাংনী থেকে টমেটোর বেশ কয়েকটি চালান যাবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে। ওই দুই দেশের সবজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার ফারমার্স এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড গাংনী কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই শুরু হয়েছে হারভেস্টিংয়ের কার্যক্রম। তিনজন কৃষকের কাছ থেকে ১০ টন টমেটো ক্রয় করে বিদেশে পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হলো। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টমেটো আরো পেলে রপ্তানির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন ফারমার্স এগ্রো প্রসেসিংয়ের কর্মকর্তারা।

সবজি চাষের শুরুতেই ফারমার্স এগ্রো প্রসেসিং এর কর্মকর্তারা ও কৃষি অফিস কৃষকদের সাথে সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুণগতমান ধরে রাখতে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। দু’মাসে কমপক্ষে ১০০ টন টমেটো রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। কৃষকদের পরিবহন ও প্রসেসিং খরচ কমাতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সরাসরি মাঠে চলে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের ব্যয় সংকোচন হচ্ছে। ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে।

মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের কৃষক মানিক জানান, স্থানীয় বাজারে যখন ১ কেজি টমেটোর মূল্য ৮ টাকা তখন ফারমার্স এগ্রো প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান সরাসরি মাঠ থেকে ১৫ টাকা অর্থাৎ দ্বিগুণ মূল্যে টমেটো ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করছে। নিজের উৎপাদিত টমেটো বিদেশে যাচ্ছে এটা ভেবে তিনি গর্ববোধ করেন। সেই সাথে দ্বিগুণ মূল্যে টমেটো বিক্রি করতে পেরে মহাখুশি তিনি। একই কথা জানিয়েছেন পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের কৃষক আল আমিন, পল্টু ও সিরাজ।

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তৃনমূল পর্যায়ের কৃষকদেরকে এই কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। সাহারবাটি, বামন্দী ও মটমুড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কৃষক ইতোমধ্যেই এ সুবিধা পেতে শুরু করেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল নানা ধরনের সাপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টমেটো তৈরি করা হচ্ছে। পরিমাপে ৮-১০ পিছ টমেটো ওজনে  হয় এক কেজি যা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক ওজন। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায় থেকে টমেটো সংগ্রহ করে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খুশি কৃষকরা।

এছাড়াও পর্যায়ক্রমে গাংনী থেকে বাঁধাকপি, ফুলকপি, কাঁচা মরিচ ও অন্যান্য সবজি বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে সিম, করলা, উচতে, পেঁপে, মাশরুম, কলা, লিচু, কুল, পেয়ারা, ভুট্টা ও নারিকেলসহ চাহিদা মাফিক বিভিন্ন প্রকার সবজি রপ্তানিতে প্রাধান্য পাবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোহায়মেন আক্তার জানিয়েছেন, বিদেশে পাঠানোর জন্য মানসম্মত সবজি বাঁধাকপি উৎপাদনে সরাসরি মনিটরিং করছে উপজেলা কৃষি অফিস। স্বচ্ছতার সঙ্গে উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট শতভাগ সফল হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মানসম্মত সবজি রপ্তানির প্রসেসিংও কৃষকরা ইতোমধ্যেই শিখে নিয়েছে। মানব দেহের ক্ষতিকারক কোন কীটনাশক টমেটো উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। গত ৩-৪ বছর ধরে বিদেশে বাঁধাকপি রপ্তানিতে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে একাধিক এগ্রো কনট্যাক্ট ফার্মিং প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান কৃষকদের সাথে সমন্বয় করে বাঁধাকপি রপ্তানি করছে। স্থানীয় বাজারে যখন বাঁধাকপির দাম কমে যাচ্ছে তখন রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে বাঁধাকপি রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলে গাংনী তথা সারা দেশের বাঁধাকপি বিশ্ববাজারে সবজি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাবে বলেও মনে করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।

এবি