কেরানীগঞ্জের ৫ গ্রামের এক প্রাপ্তি ডাঃ নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৫:২২ পিএম

এ যেনো নামেই ঢাকা! স্বাধীনতার ৫১ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ছিটমহল খ্যাত হযরতপুর ও কলাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে। কৃষি নির্ভর পাঁচ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য যেখানে নেই কোন পাকা রাস্তা সেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেনো একটু বিলাসিতাই। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও গ্রামে মাঠসহ বিদ্যালয় পেয়ে খুশি চর বাসী। তাই সদ্যনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: নুর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় স্বপ্ন দেখাচ্ছে চরবাসীকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন  চর চামারদহ, চর খাড়াকান্দি, হোগলাগাতি, মধুরচর ও দক্ষিণ ঢালিকান্দি গ্রাম। যেখানে  রয়েছে ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন ও ১টি মাদ্রাসা, তবে ছিলো না কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ফলে পাঁচ গ্রামের শতাধিক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে পাচ-সাত কিলোমিটার দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যেতো তুলনামূলক কাছের কলাতিয়া, তালেপুর বা পাশের উপজেলা নবাবগঞ্জের কোন বিদ্যালয়ে।

তবে সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারতো না, তাছাড়া সারাবছর নৌকা দিয়ে ধলেশ্বরী নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়াও ছিলো ঝুকিপূর্ণ, বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘপথ হেটে আসা যাওয়ার সময় পড়তো নানা বিরম্ভনায়, ফলে বাধ্য হয়েই কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে ও ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়ে দায় সারেন অবিভাবকরা।

সাম্প্রতিককালে চরের হোগলাগাতি গ্রামে সকল সুযোগসুবিধা সম্বলিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় খুশি স্থানীয়, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় চর এলাকায় বাড়বে শিক্ষার হার কমবে ঝড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।

বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, চর এলাকায় ৫ বিঘা জায়গায় প্রাথমিকভাবে ৭ রুমের একটি টিনশেড ঘরে শ্রেণি কক্ষসহ একটি অফিস রুম নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করেছে। সামনে মাঠে, যেখানে শুভা পাচ্ছে ৫ তলা ভবনের আধুনিক ডিজাইনের নকসা যার কাজ খুব শীগ্রই শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। স্কুলটিতে এখন ৭২ জন শিক্ষার্থী এবং ১২ জন শিক্ষক রয়েছে।

স্কুলের শিক্ষার্থী নুসরাত জানান, আগে তারা ৪ কিলোমিটার দূরের কলাতিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে পড়া লেখা করতো। এখন গ্রামে হাই স্কুল হওয়ায় এখানে ভর্তি হয়েছেন, গ্রামে হাই স্কুল হওয়ায় তাদের কষ্ট লাঘব হয়েছে বলে জানায় এ শিক্ষার্থী।

স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী তামিম বলেন, আমি আগে নবাবগঞ্জের একটি স্কুলে পড়তাম, এখন বাড়ীর পাশে স্কুল, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শাহীন আহমেদ কে ধন্যবাদ

হুগলাগাতি গ্রামের কৃষক মমিন মিয়া বলেন, আমরা নাকি ঢাকার লোক, আমাদের চলাচলের জন্য ভালো রাস্তা নেই, আর পড়া-লেখার জন্য কোন হাইস্কুল না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা বহু কষ্ট করে ৫/৭ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লিখা-পড়া করতো। এখন গ্রামে হাইস্কুল হওয়ায় সব দিকেই ভালো হয়েছে। আশা করি ব্রিজটাও হয়ে যাবে।

চর চামারদহ গ্রামের মফিজ উদ্দিন ঢালি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বিভিন্ন সরকার দীর্ঘ সময় দেশ পরিচালনা করছে কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছুই করেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ আমাদের রাস্তা করে দিয়েছে, এখন হাইস্কুল করে আমাদের মনের আশা পুরণ করেছে। স্কুল হওয়াতে আমরা অনেক খুশি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ এইচ আবিদ বলেন, অবহেলিত পাঁচ গ্রামে একটি উচ্চবিদ্যালয় হওয়ায় এই এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও উন্নত জীবনযাপন করবে। এলাকার পরিবেশ উন্নত হবে, ছেলে মেয়েরা আরও শিক্ষিত হবে, সর্বপরি এই স্কুল এলাকার চিত্র বদলে দিবে।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলছেন, শুধু জনপ্রতিনিধি নয় সাধারণ মানুষ হিসেবে চর বাসীর কাছে এটি ছিলো তার ওয়াদা। একটু দেরিতে হলেও নিজ অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধা পিতার নামে একটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চবিদ্যালয় করতে পেরে তিনিও খুশি। খুব শীগ্রই এখানে চারতলা পাকা ভবন নির্মাণ ও মাঠ বৃদ্ধির জন্য আরো জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, এলাকাটি উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়, এ এলাকার ছেলে মেয়েরা বহু কষ্টে আশেপাশের এলাজায় গিয়ে পড়া লেখা করতো। এখন এখানে স্কুল হওয়ায় গ্রামের মানুষ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি  সকল পরিবেশেরও উন্নতি হবে। জাতি গঠনে নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় ভূমিকা রাখবে বলেও আশা এই শিক্ষা কর্মকর্তার।

সুযোগসুবিধাসহ নিজস্ব মাঠ আর অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর ধারা পরিচালিত নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কুল ও কলেজ হয়ে সারা দেশে সুনামের পাশাপাশি গ্রামবাসীর আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলবে এটা চাওয়া।

কেএস