আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাওর অঞ্চলকে জাতির পিতা ভালবাসতেন। অনেক সংগ্রামের পর গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভূমিকা অনেক। মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চল অনেক ভূমিকা রেখেছে। ৯৬ ও ৮১ সালে নির্বাচনে আমি এই অঞ্চলে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে হাওরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হ্যালিপ্যাড মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতা মাত্র ৩ বছরে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঘাতকরা জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির পিতা দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। আমরাও দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে কাজ করছি। এ দেশের মানুষ বিচারহীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই হাওর অঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিলো। হাওরে রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্ট কিছুই ছিলো না। এই অবস্থা থেকে গত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হাওরের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হাওরে উড়াল সড়ক হবে। ইতোমধ্যে আমরা একনেকে তা অনুমোদন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। করোনার সময় ধান কাটার লোক ছিলো না। আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দিয়েছিলাম কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিতে।
তিনি বলেন, হাওরে বন্যা হলে রিলিফের ব্যাবস্থা করেছি। হাওরের প্রতিটি এলাকায় আমরা স্কুল করে দিয়েছি। সরকারি স্কুলবো কলেজ করে দিয়েছি। ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম করে দিয়েছি। আমরা কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দিয়েছি। বিনামূলে বই দিয়েছি। প্রতিটি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। ছেলে মেয়েরা যেন লেখাপড়া করতে পারে। ৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কৃষকের জন্য বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদান করেছে। ১০ টাকা দিয়ে কৃষকরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। প্রত্যেকেই আজ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সরকারের অবদানে। একটি লোকও যেন গৃহহীন না থাকে সে লক্ষ্যে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছি। যারা গৃহহীন ভূমিহীন ছিলো তাদের গৃহ করে দিয়েছি। যাদের ভিটা আছে গৃহ নেই তাদেরকেও গৃহনির্মাণ করে দিবো আমরা। প্রতিটি এলাকায় আমরা বিদ্যুতের ব্যাবস্থা করেছি। আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়ন করে গ্রামে শহরের সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছি। চিকিৎসা সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আগে হাওরে ছিলো শুকনায় পাও বর্ষায় নাও। এখন আর সেই অবস্থা নেই। হাওরের ফসল রক্ষায় বাধ নির্মাণ কাজ চলছে। ফসল উৎপাদনের সকল ব্যাবস্থা আমরা করছি। ১০টি উপজেলায় খাল পুনখনন করেছি। ৫৬ কিমি দৈর্ঘ ভৈরব কিশোরগঞ্জ সড়ক করে দিয়েছি। ১৫ কি.মি. কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর সড়ক, কিশোরগঞ্জ চামড়াঘাট সড়ক আমরা তৈরি করেছি। ১৫৯ কিমি নদী খনন করা হয়েছে। আজকে কিশোরগঞ্জ আর পিছিয়ে নেই। আমরা মৎস্য আহরণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ফসল সংরক্ষণে আমরা সকল ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, হামিদ ভাই রাষ্ট্রপতি হবার পর উনার ছেলে তৌফিককে আপনারা ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের মানুষ ৩ বার নৌকায় ভোট দিয়েছেন। তাই আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। নৌকায় ভোট দেয়ায় আজ হাওরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ থেকে ৩ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভৈরবের জিল্লুর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রপতি, বর্তমানে হামিদ ভাই আছেন।
নৌকায় ভোট দিলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আ.লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশে লুটপাট হয়। তারা জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায়নি। তারা দেশের কথা জনগণের কথা চিন্তা করে না। এরা ক্ষমতায় এসে দেশের লুটপাট করে। যারা বোমা হামলা করে, গ্রেনেড হামলা করে তাদের দ্বারা দেশের কল্যাণ সম্ভব নয়। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আপনারা নৌকায় ভোট দিবেন ওয়াদা দেন। আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা মা ভাই বোন সবাইকে হারিয়েছি। আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বাবার স্নেহ আপনাদের কাছ থেকেই পাই।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হকের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে মিঠামইনে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেনানিবাস উদ্বোধন করেন তিনি।
মিঠামইন সদরের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জায়গায় নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধনের পরে দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তার পৈতৃক বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী।
সেখানে জোহরের নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই টেবিলে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা।
রাষ্ট্রপতির বাড়িতে দুপুরের খাবার ও বিশ্রামের পর বিকাল ৩টায় মিঠামইন সদরের হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত জনসমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে হাওড়ে উৎসমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
কেএস