বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহেরের জানাজায় মানুষের ঢল, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম

হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী ও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সম্পন্ন হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু তাহেরের নামাজে জানাজা। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয় তাকে।

রোববার (১৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে জানাজার নামাজ শেষে পৌর শহরে তার প্রতিষ্ঠিত মহিউস সুন্নাহ জালালিয়া মাদ্রাসার কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শাহজাহান কামাল,  লক্ষ্মীপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট, লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ।

জানাজার নামাজের আগে কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহের গতকাল (১৮ মার্চ) শনিবার দুপুর পৌঁনে ২টার দিকে লক্ষ্মীপুরের নিজ বাসভবন পিংকি প্লাজায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৫৩ সালের ৮ নভেম্বর জন্ম এ আওয়ামীলীগ নেতার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আবু তাহের দীর্ঘদিন ধরে দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তিনি মুজিববাদী তাহের হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল।

তাহেরের মেজো ছেলে একেএম সালাহ্ উদ্দিন টিপু সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি।

জানা গেছে, তিনি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ভারতের রাজনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরে আটিলারী গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে মহুরী নদী, কোম্পানীগঞ্জ, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রায়পুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৭২-৭৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের আহবাহক, ১৯৭৬ সালে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮০ সালে পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৪ সালে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি, ১৯৮৭ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯০ সালে থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ১৯৯৮ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

আরএস