উপকুলীয় জেলা বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় গত চারদিনের বৃষ্টিতে তরমুজ খেতে যেমন পানি জমেছে। আর শিলা বৃষ্টিতে যে তরমুজগুলো তোলার মত ছিল তাও নষ্ট হয়ে গেছে এতে শঙ্কিত হয়ে পরছে চাষীরা। কিভাবে তারা পরিশোধ করবেন ধার দেনার টাকা উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না ক্ষেত থেকে পানি অপসারন করারও।
তরমুজ চাষীরা বলছেন, গত চারদিনের বৃষ্টিতে খেতে যে পরিমান পানি জমা হয়েছে এতে ক্ষতির পরিমানটা কম হবে। তবে আরও বৃষ্টি হলে খেত শেষ হয়ে যাবে। চাষীরা জানিয়েছেন এই চারদিনে বৃষ্টির কারণে গাছে ছোট ছোট তরমুজের করাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
তারা জানান, তরমুজ আবাদের জন্য অনেক এনজিও এবং ব্যাংক থেকে লোন করেছেন। তারা এখন চিন্তিত ফল উৎপাদন নিয়ে।
বরগুনা জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চারদিনের বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেতের কোনো সমস্যা হবে না। তবে এরপর বৃষ্টি হলে তরমুজের অনেক ক্ষতি হবে। এ বছর এই জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই-এক দিন হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হবে। গত দুই দিনে গড়ে ২০ - ৩০ মিলিটিার বৃষ্টি ঝড়েছে।
সরেজমিনের দেখা গেছে, বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তরমুজ খেতের বেডের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমেছে। চাষীরা জমে থাকা বৃষ্টির পানি সেচ পাম্প ও পাত্র দিয়ে সেচে অপসারণ করছেন।
বরগুনা সদর উপজেলা পরিরখাল গ্রামের তরমুজ চাষী শাহ আলম ১০০ শতাশং জমিতে তরমুজ আবাদ করেছে তিনি। তার ক্ষেতের গাছ গুলোতে ফুল ও ফলে ভরা , চার দিনের বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে পানি জমেছে। ক্ষেত থেকে পানি অপসারণ করছেন তিনি।
শাহ আলম আরো বলেন, ইসলামি ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা লোন করে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু গত চার দিনের বৃষ্টি পানি ক্ষেতে জমেছে। ক্ষেত রক্ষার জন্য নালা কেটে পানি সরিয়ে দিচ্ছি। রোদে তরমুজ গাছ রক্ষা করা যাবে কিনা চিন্তায় আছেন তিনি।
আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মনিরুল ও কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া গ্রামের কৃষক সরদার, জয়নুল সিকদার ও শাহরুখ প্যাদা বলেন, ‘লাখ লাখ টাকা ঋণ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন আশা-ভরসা বলতে কিছুই রইল না। আল্লাহ আমাদের কেন এমন সর্বনাশ করল জানি না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।’
আমতলী গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল বলেন, চার একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বৃষ্টিতে ক্ষেতে জমা পানি সরাতে নালা কেটে দিয়েছি, এরপর বৃষ্টি হলে আমাদের আর রক্ষা নাই। তরমুজ উৎপাদনের এখন পযন্ত দুইলাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধার করে এই টাকা জোগার করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে হয়তো কাঙ্খিত ফল পাবো না।
নিমতলী গ্রামের রাসেল দেড় একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে পানি জমেছে। ক্ষেত থেকে পানি নামানোর চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আবার বৃষ্টি হলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালীয়া ইউনিয়নের চাঁন্দখালী গ্রামের নিখিল ঘরামী বলেন, ধার দেনা করে দুই একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছি আমি বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের বেডের ভিতরে যেমন পানি জমে আছে তা অপসারণ করতে পারছে না। আর যে তরমুজ তোলার মত ছিল তাও শিলা বৃষ্টি পড়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে কিভাবে ধার দেনা পরিশোধ করব কিভাবে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান আমার সংবাদকে বলেন, বড় কোনো দুযোগ নাই। আগামী দুই-একদিন হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হবে। এতে তরমুজের ক্ষতি হবে না। তবে শিলা বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার কাযালয় উপ-পরিচালক আমার সংবাদকে আবু সৈয়দ জোবায়দুল আলম বলেন, যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে তরমুজের কোনো ক্ষতি হবে না। এরপর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তরমুজ ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হবে।
আরএস