ময়মনসিংহের নান্দাইলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় জেলেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এতে করেই ওই এলাকার শতাধিক জেলে পরিবার মাছ ধরতে না পেরে বেকার অবস্থায় অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
শুকনো মৌসুমে নদে হাটু বা কোমর পানিতে নেমে কেউ মাছ ধরার জাল দিয়ে, কেউবা বড়শি দিয়ে, আবার কেউ পলো দিয়ে মাছ ধরে তা বিক্রি বা নিজের পরিবারের খাবারের জন্য নিয়ে যেতো। কিন্তু গত তিন বছর ধরে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে শক্ত করে বাধ দিয়ে মাছ চাষ করায় মাছ ধরার সুযোগ নেই সাধারণ জেলেদের।
তবে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামে জাঙ্গালিয়া কালিবাড়ির পিছন দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বয়ে গেছে। নদের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশে বাঁশ ও জাল দিয়ে বাঁধ দিয়ে সেখানে তিন বছর ধরে কয়েকজন প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন।
ফলে জেলে পরিবার মাছ ধরতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ অন্য পেশায় জড়িয়ে বহু কষ্টে জীবন-যাপন করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা যায় স্থানীয় বাসিন্দারা নদে বাঁধ দেওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খুলতে চায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার এখানে জাল দিয়ে প্রচুর মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে অন্য কারোর পক্ষে মাছ ধরা সম্ভব হয়না। পরে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সেখানে মৎস্য চাষের সাথে জড়িত রয়েছেন জালাল মল্লিক, মুক্তুল মল্লিক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিনসহ মোট সাতজন। ওই সাতজনের সাথে শরীক আছেন আরো অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
প্রায় তিনবছর ধরে মুক্ত জলাশয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে মাছ চাষ করা হলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। খারুয়া ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা মাছ চাষী জালাল মল্লিক বলেন, নদী তো এমনিই পড়ে আছে। এই কারণে কয়েকজন মিলে নিয়মের মধ্যে থেকে সেখানে মাছ চাষ করছি। এ বিষয়ে আপনার সাথে পরে দেখা করব।
অন্য মৎস্যচাষি মুক্তুল মল্লিক বলেন,‘আমরা তো নেতার (জালাল মল্লিক) পিছে থাকি। তিনিই সব বলতে পারবেন’। স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো একলা করি না। আমার সাথে আরো ৫০ জন আছে। আর এই মাছ আমরা সবাইরে দিয়াই খাই’।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারমান কামরুল হাসনাত ভূইয়া মিন্টু বলেন, ‘ওইখানে মৎস্যচাষ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।’
নান্দাইল উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহানা নাজনীন জানান, তিনি বিষয়টি অবগত নয়। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল মনসুর জানান, বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে সেখানে পাঠানো হবে।
এমএইচআর