সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বেনাদেনা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আকলিমা খাতুন। অভাবের কারনে দুবেলা খাবার জুটতো না। পরিবারে না খেয়ে থাকা মানুষের মুখের দিকে তাকাতে তার বুক ফেটে যেত।
স্বামী পরিত্যক্তা পিতা মাতার সংসারে নিজেকে বোঝা ভাবতেন। নিরক্ষর আকলিমা একসময় মিশন মহিলা উন্নয়ন সংস্থা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সহযেগিতায় এলজিইডি ডে লেবার কাজ নেন রাস্তা মাটি দেয়া মেরামত শ্রমিকের।
তবুও যেন অভাব তার পিছু ছাড়ে না। এরপর শুরু করেন পশু পালন ও চাষাবাদ। এখন সে সফল কৃষি উদ্যোক্তা নানা ধরনের ফসল উৎপাদনসহ গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করে প্রতি বছর এখন লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, পর্যায়ক্রমে স্বাবলম্বী করে তুলছেন গ্রামের অনেক নারীকেও। এখন গ্রামে কৃষি পরামর্শ দরকার হলে সবাই ছুটে যায় আকলিমার কাছ।
তার ঘুরে দাঁড়ানের পিছনে ক্রিশ্চিয়ান এইড এর অর্থায়নে, নওয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশনের কারিগরি সহযোগিতায় মিশন মহিলা উন্নয়ন সংস্থা বাস্তবায়নে নারী নেতৃত্বাধীন সিএসও দের অংশগ্রহণমুলক জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন প্রকল্প।
প্রশিক্ষণ শেষে ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ- এর পক্ষ থেকে প্রশিক্ষিতদের পুঁজি সরবরাহ করা হয়। এরপর আকলিমা খাতুনের পরিশ্রমে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। আকলিমা খাতুন তার জীবনের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার সংবাদ প্রতিবেদককে বলেন, "প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়ে মানুষ কৃষি কাজ কত্তি পারবো। তখন চিন্তা করলাম রাস্তায় লোক জনের সামনে কাজ করতি লজ্জা লাগে। কৃষি কাজ, গরু ছাগল পোষার ট্রেললিং নিলাম। এখন আর কষ্ট নেই আল্লাহ ভালো রেখেছে। গ্রামের সবাই আমার কাছে শিকতি আসে"।
আকলিমার সফলতার পিছনে কালিগঞ্জ মিশন নারী উন্নয়ন সংস্থা তারাই তাকে বাড়ি থেকে এনেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মিশন নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প পরিচালক মো. শেখ আব্দুল্লাহ বলেন " আকলিমা স্বামী পরিতক্তা পিতার সংসারে একটা ভাঙা ঘরে বাস করে। তার কোন সন্তান-সন্ততি নাই। আমরা প্রথমে তাকে এলজিডির ডেলিভারি হিসেবে মাটির কাজের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করতে সাহায্য করি।
সে বিভিন্ন সময় শ্রমিকের কাজ করতো। আমরা যখন তাকে প্রশিক্ষণের কথা বললাম সে রাজি হয়ে গেল। আজ প্রশিক্ষণ নিয়ে সে দক্ষ। আমরা তাকে আরো বিভিন্নভাবে সাহায্য দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত তার খোঁজখবর নেই। সে খুব ভালো মানুষ অন্যদেরকে সে শিখায় মিশন নারী উন্নয়ন সংস্থা সবসময় তার পাশে আছে। আকলিমা আমাদের গর্ব। "
আকলিমার মত সুবিধা বঞ্চিতরা এমন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে। দেশের উন্নয়নে শত আকলিমা এগিয়ে আসুক এমনটাই প্রত্যাশা সূধীজনের।
এমএইচআর