ফারাক্কার বিরুপ প্রভাব

পানিশূন্য গড়াই এখন ধু ধু বালুচর

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

* কাজে আসছে না ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প

ফারাক্কা বাঁধের  বিরুপ প্রভাবে এক সময়ের প্রমত্তা গড়াই নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। মিঠা পানির আধাঁর গড়িয়ে বর্তমানে কোন পানির প্রবাহ নেই। কুষ্টিয়ার গড়াই নদী এখন পানি শূন্য হয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে।

অথচ গড়াই নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নদী খনন কাজ করছে সরকার। উদ্দেশ্য হলো শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও মিলছেনা সুফল।

শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর উৎসমুখ তালবাড়ীয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ৪৪ কি.মি. খনন কাজ করছে সরকার। একযুগেরও বেশী সময় ধরে গড়াই রক্ষার এ প্রকল্প যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হবার কথা। তবে বিভিন্ন অজুহাতে ও কারণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় বাড়লেও দৃশ্যমান কোন সফলতা দেখতে পাচ্ছে না সরকার। নদীতে পানি প্রবাহতো দূরের কথা কোথাও কোথাও এ ফোঁটা পানিও নেই। দিন দিন এ নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদী পারের মানুষ এখন পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে।

জিআরসির নদী খনন নিয়ে নদী পারের সাধারণ মানুষ হাজারও অভিযোগ তুলেছে। সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, নদী খনন  যদি একদিন হয়, পরের ৫দিন বন্ধ থাকে। এভাবে খনন করলে কোন সুফল পাওয়া যাবে না।

ইদ্রিস আলী নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, নদী থেকে বালু কেটে নদীর মধ্যে রাখা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। বর্ষা মৌসুম আসলেই নদীর কাটা বালু  নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। আর বালু ব্যবসায়ীরা বালু কেটে অন্যত্র বিক্রি করছে। যার ফলে নদীর কোন খনন চোখে পড়ে না। বর্তমানে আমরা নদীতে গোসল করবো সে পানিটুকু নেই। সরকারে এই নদী খনন প্রকল্প  শুধু টাকারই অপচয় হচ্ছে। কোন কাজেই আসছে না।

পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড়াই নদী খননের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। গড়াই নদী না বাঁচলে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য যেমন রক্ষা হবেনা তেমনি সুন্দরবনও বাঁচবে না। ফলে এ সবের পাশাপাশি  হুমকীর মুখে পড়বে দেশ।

সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য লবনের যে মাত্রা প্রয়োজন সেটা কে ব্যালেন্স করে গড়াই নদী। তবে দিনের পর দিন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে  সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে কিনা  তা নিয়ে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

ড্রেজার অপারেশন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ, নদী খননের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  এতে করে গড়াই নদীতে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা কিন্তু সে পরিমাণ পানি কেন পাচ্ছি না  তা বুঝতে পারছিনা। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, গড়াই নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। নদীটাকে সচল রাখতে যতটুকু প্রয়োজন সব টুকুই করা হবে। তিনি বলেন, এ গড়াই নদী খনন একটি বড় প্রকল্প। আমরা  সঠিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

এদিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খাবারের পানি তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। পানির স্তর অধিকমাত্রায় নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলগুলো পানি তুলতে পারছে না। ফলে খাবার পানির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার।

এআরএস