বরিশাল সিটি নির্বাচন

নৌকা পেতে চলছে শেষ মূহুর্তের লবিং

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ, ইফতারির আয়োজনের মাধ্যমে তাদের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বিভিন্ন পোস্টার, ভিডিও কিংবা ছবি দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে দোয়া চাচ্ছেন। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে এবার সম্ভ্রাব্য আটজন মেয়র প্রার্থীর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। 

তবে এরমধ্যে সবার মুখে এখন চাচা-ভাতিজাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কে পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এ নিয়েই চলছে সর্বমহলে আলোচনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পূর্ব ঘোষনা তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। 

আর সিটি নির্বাচনে বরিশালের ইতিহাস বলছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাহিরে এখানে অন্যকোন দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সুযোগ-সম্ভাবনা খুবই কম। তাই সবার ধারনা সরকার দল থেকে যে মনোনয়ন পাবেন তিনিই হয়ে যাবেন আগামীর সিটি মেয়র। যেকারণেই নগরবাসীর আগ্রহ কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৮ এপ্রিল। কারণ ওইদিন দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা রয়েছে। ওই সভায় নির্ধারন হবে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। 

তবে সে প্রশ্নের জবাব নিজের পক্ষে আনতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজন প্রার্থী এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়। শেষসময়ে লবিং ও তদ্বীর করতে যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে। 

সূত্রমতে, বর্তমান সিটি মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার একমাত্র চাচা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই, ১৫ আগস্ট কাল রাতে গুলিবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত নৌকা পেতে ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছেন। তাই বরিশাল নগরবাসী এখন অধীর আগ্রহে আছেন চাচা নাকি ভাতিজা নৌকার কান্ডারী হয়ে আসছেন বরিশালে। 

অপরদিকে চাচা ও ভাতিজা ছাড়াও নৌকা পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মো. মঈন তুষার। 

সূত্রে আরও জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ভারতের আজমির শরীফ জিয়ারতের পর সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বর্তমানে রাজধানীতে অবস্থান করছেন। সাথে তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’ও রয়েছেন। 

বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে মনোনয়ন ক্রয় করতে বরিশাল থেকে শীর্ষ স্থানীয় ২৫/৩০ জন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আর নির্বাচনটা যেহেতু সিটি নির্বাচন তাই মহানগর আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীকে সমর্থন করবে তার বাহিরে দল প্রার্থী দিবেনা বলে বিশ্বাস করছি। 

অপরদিকে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন সেই দায়িত্ব শতভাগ পালন করবো। খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, তিনি (খোকন সেরনিয়াবাত) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন ভাগ্নে। ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েও ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ যতোবার ক্ষমতায় এসেছে খোকন সেরনিয়াবাত কিছুই চাননি। এবার তিনি বরিশাল নগরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়ন দাবি করেছেন। আমি বিশ্বাস করছি প্রধানমন্ত্রী তার (খোকন সেরনিয়াবাত) এই শেষবয়সের দাবী পূরন করবেন। 

বিপ্লব আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত দশজন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন করে তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। 

বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, বিগত সাড়ে চার বছর ধরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নগরবাসীর এখন পরিবর্তন চায়। যেকারণেই আমি মেয়র প্রার্থী হয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন ফরম জমা দিয়েছি। 

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিক নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করতে চাই। 

আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী মঈন তুষার বলেন, বর্তমান মেয়রের সময়ে বরিশাল নগরবাসী কাঙ্খিত সবধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জনগণ আজ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই জনগণের স্বার্থে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আবেদন করেছি। 

তিনি আরও বলেন, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আওয়ামী লীগের বাহিরে হেভি ওয়েটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, চরমোনাই পীরের দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করিম ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। 

সূত্রমতে, জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আগে ভাগেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মনোনীত করা ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নগরবাসীর সেবার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমাকে দল আগাম মনোনয়ন দিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত। 

এছাড়া গত সিটি নির্বাচনে আলোচনায় থাকা একমাত্র নারী প্রার্থী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দলের নেতৃবৃন্দরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তাই দল যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেইভাবেই কাজ করা হবে। 

এছাড়া বিএনপি শিবিরে নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা না হলেও সাবেক প্রয়াত মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এরআগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ১৬ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ মে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২৫ মে পর্যন্ত। পরবর্তীতে আগামী ২৬ মে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরিশাল নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনে হালনাগদ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৭ জন।

আরএস