মুন্সীগঞ্জে রেডিমেড পোশাক পল্লীতে ব্যস্ত কারিগররা

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৬:০৫ পিএম

রেডিমেড পোশাক পল্লী হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন রামপাল ও পঞ্চসার ইউনিয়ন এলাকা। এখানে রয়েছে সহস্রাধিক পোশাক তৈরির ছোট ছোট কারখানা। ঈদকে সামনে রেখে পোশাক তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে পল্লীর কারিগররা।

সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের সিপাহীপাড়া, শাঁখারীবাজার দরগাবাড়ি, হাতিমারা ও পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুর, কালিখোলা, রামেরগাঁও, নয়াগাও, ভট্টাচার্যের বাগ, ডিঙ্গা ভাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি ক্ষুদ্র গার্মেন্টস। 

ঈদকে সামনে রেখে এখানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন বাহারি রঙয়ের পোষাক তৈরি হচ্ছে রাতদিন। এখানে তৈরি পোশাক ঢাকার সদরঘাট, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় পাইকারি মার্কেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণীবিতানে।

কারিগর মানিক মিয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমদের ২ মাস আগে থেকে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। চলবে ২৫ রোজা পর্যন্ত।

আমি ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাই। পাশাপাশি ঈদ বোনাস। ১২ ঘন্টা আমার ডিউটি। তারপর বাড়তি সময় কাজ করি কারণ, ঈদের কাজের অনেক চাপ রয়েছে। তবে মোটামুটি এখানে কাজ করে ভালো আছি।  আমাদের বেতন যদি একটু বাড়ায় তাহলে আমরা আরও ভালো থাকবো।

আরেকজন কারিগর মো. সাকিব জানান, এখানে আমরা ঈদে বিভিন্ন ধরনের জামা তৈরি করি। যেমন সুতি, ফেন্সি, স্কার্ট ইত্যাদি। সব লেডিস আইটেম।

নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় আমরা পাইকারি দামে বিক্রি করি। ওখান থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন- সিলেট, বগুড়া রাজশাহী পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যায়। যেহেতু এখানে ছোট-ছোট গার্মেন্টস তাই আমাদের টার্গেট নিম্নে ৫ হাজার ডজন পণ্য এবার আমরা তৈরি করব। অন্য বছরের তুলনায় এই বছর ব্যবসা একটু খারাপ। সবাই পর্যাপ্ত পরিমাণে মাল নিয়ে রেখেছে কিন্তু সেল করতে কষ্ট হচ্ছে। অন্যান্য বছর যেমন ভালো একটা সেল হতো এই বছর একটু কম হচ্ছে কারণ মানুষের হাতে টাকা-পয়সা কম।

কারিগর জামাল হোসেন বলেন, পোশাক শিল্পের জন্য মুন্সীগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা ৷ আর এ মুন্সীগঞ্জে অনেক রকমের প্রোডাক্ট আছে। আমরা বিভিন্ন আইটেমের কাজ করি। ফ্রক, স্কার্ট, লেহেঙ্গা ইত্যাদি যাবতীয় সবকিছু আমাদের এখানে পাওয়া যায়। আর এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সেল হয়। আমাদের দোকান আছে নারায়ণগঞ্জে, ইসলামপুরের সদরঘাটে ও কেরানীগঞ্জে। এই ‘জায়গা টা শহরের মতো হিবিজিবি নয়। তাই এখানে কাজ করে ভালো লাগে।

এই পোশাক পল্লীতে আধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটারাইজড অ্যামব্রয়ডারি মেশিনে করা হচ্ছে নানা রকম নান্দনিক কারুকাজ। পোশাককে বর্ণিল করতে কারিগররা নিপুণ হাতে যুক্ত করছেন রঙ-বেরঙের লেইছ ও পুঁথি। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইনে এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা।

শাঁখারীবাজার ফাহিম কারখানার মালিক লোকমান হোসেন আদর বলেন, আমাদের এই ব্যবসাটি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে। মুন্সীগঞ্জের একটা ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা এটি। আমাদের এই মালগুলা কম মূল্যে বিক্রি হয় বলে সারা বাংলাদেশেই প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রযেছে। আমাদের এইখানে ১০টি মেশিন আছে।

প্রতিদিন আমরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করি। আমাদের মালগুলোর কোয়ালিটি অনেক ভালো হয়। ফলে আমাদের মালগুলোর অনেক চাহিদাও আছে। সেকারণে ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে মালগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে।

এখানে ১ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের সব লেডিস আইটেম তৈরি করা হয়। আর এখানকার যা মাল তৈরি হয় তা  ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তারা পাইকারিভাবে সেল দেয়। এখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা এসে এই মালগুলো নিয়ে যায়। এরপর তারা খুচরা দোকানে তা বিক্রি করে।

মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক জানান, এই পোশাক পল্লীতে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ধারাটি অব্যাহত থাকলে এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে।

মুন্সীগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, রমজানের ঈদ ঘিরে এখানকার  প্রায় সহস্রাধিক ক্ষুদ্র কারখানায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট রয়েছে। সারাবছরে সেই বিক্রির টার্গেট ছাড়িয়ে যায় প্রায় হাজার কোটি টাকা। এখানে ছোট-ছোট প্রায় সহস্রাধিক মিনি গার্মেন্টস রয়েছে এবং একেকটা মিনি গার্মেন্টসের সঙ্গে অন্তত যদি ১০ বা ২০ করে এভারেজে শ্রমিক কাজ করেন। সেখানে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তাদের যে ব্যবসায়িক ডেভেলপমেন্ট বা অগ্রগতি রয়েছে তা অব্যাহত থাকলে অচিরেই তারা তাদের মিনি গার্মেন্টসগুলো বড় গার্মেন্টসে পরিণত করতে পারবে এবং বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ স্থলে পণ্যরপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিশেষ করে এদের মোকামগুলো হলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় তাদের এ পণ্যগুলো সেল হয়ে থাকে। এ পণ্যগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় বায়াররা এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যান। আবার কখনো কখনো তারা নিজের পণ্যগুলো নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় নিয়ে যান এবং সেখানেও তারা বিক্রি করতে পারেন।

এআরএস