মাগুরায় রোস্তম মল্লিক (৫২) নামে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে শহরের কলেজ মসজিদের পাশের রাস্তায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত ওই সাংবাদিকের অভিযোগ, মাগুরা-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সিরাজুল আকবরকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী কেউ তাঁর ওপর হামলা করেছেন।
রোস্তম মল্লিক মাগুরা পৌর এলাকার পারলা গ্রামের প্রয়াত ঈমান উদ্দিন মল্লিকের ছেলে। তবে তিনি বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। রোস্তম মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ নামের একটি পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল রাতেই সাতজনকে মাগুরা সদর থানা-পুলিশ আটক করেছে। তবে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
জানা যায়, ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সঙ্গবদ্ধ সন্ত্রাসীচক্র মাগুরার কলেজ পাড়ায় অবস্থিত `ফুড ক্যাফে রেস্টুরেন্ট` মাগুরা জেলার কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সম্মিলিত ঈদ পুনর্মিলনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ফুড ক্যাফে থেকে বের হওয়ার সময় তার উপর এ অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
তবে হামলকারীদের রোস্তম মল্লিক চেনেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গতকাল তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মাগুরা-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সিরাজুল আকবরকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টের জেরে স্থানীয় প্রভাবশালী কেউ ওই তরুণদের দিয়ে এ হামলা করিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
রোস্তম মল্লিকের ওই ফেসবুক পোস্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি সেখানে মাগুরা-১ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য সিরাজুল আকবরের ব্যাপারে বিভিন্ন ইতিবাচক কথা লিখেছেন। এর মধ্যে রোস্তম মল্লিক লিখেছেন, ‘সিরাজুল আকবর কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তিনি কখনো সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি। ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভা নির্বাচনে কখনো মনোনয়ন–বাণিজ্য করেননি। কখনো টেন্ডারবাজি বা প্রকল্প–বাণিজ্য করেননি।’ পোস্টের শেষ ভাগে তিনি লিখেছেন, ‘মানবতার সেবা দিয়ে তিনি (সিরাজুল আকবর) এলাকাবাসীর মন জয় করেছেন। আজকের এই দিনে তাঁকে খুব মনে পড়ছে।’
প্রয়াত সংসদ সদস্যকে নিয়ে ইতিবাচক লেখার কারণে কেন হামলা করা হবে, জানতে চাইলে রোস্তম মল্লিক বলেন, ‘যে খারাপ কাজগুলো সাবেক এমপির সময়ে হয়নি, এখন হয়তো সেগুলো হচ্ছে। এ কারণে কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এর আগেও নেতা-কর্মীদের দিয়ে আমার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করানো হয়েছে।’
গুরুতর আহত সাংবাদিকের স্ত্রী রোকেয়া মল্লিক ও বড় সন্তান আকাশ মল্লিক জানান, রোস্তম মল্লিকের একটি হাত ও একটি পা ভেঙে গেছে। মাথায় প্রচন্ড জোরে রড ও হকিস্টিকের আঘাতে ৬ টি সেলাই দেয়া হয়েছে। মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দ্রুত ভাবে মাগুরা২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্মরত চিকিৎসক মাগুরা থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাংবাদিক রুস্তম মল্লিকে ঢাকাতে স্থানান্তর করেছেন।
সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক জানান, তার কলমকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে তার উপর এই হামলা চালিয়েছে।
রোস্তম মল্লিকের স্ত্রী জানান, ফুড ক্যাফে রেস্টুরেন্টে একটি অনুষ্ঠান ছিল, রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে আমন্ত্রিত মেহমানরা চলে যাওয়ার পরে ১০/১৫ জনের একটি দল প্রথমে হাত বোমা নিক্ষেপ করে, পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করতে থাকে , এক সময় রাস্তার উপর পড়ে গেলে, তার ছোট মেয়ে বাবাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করে হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়।
তবে এ ব্যাপারে জানতে মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জব্বারুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, মাগুরা কলেজ রোড এলাকায় যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক আমিও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, দায়িত্ব পালনের স্বার্থে তিন থেকে পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে আমি চলে আসি আমার ডিউটিতে। তার অনেক পরে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত ভাবে হামলা চালায় সাংবাদিক রুস্তম মল্লিকের উপর। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সহ আমার মাগুরা সদর থানার একটি চৌকস টিম দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মধ্যেই দোষীদের চিহ্নিত করে সর্বমোট সাতজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি,তদন্ত প্রতিবেদন চলমান রয়েছে।
আরএস