নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নতুন শ্রমিক যোগদানে পূর্বের অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত দক্ষ পাঁচশ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এতে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা থমকে যাওয়ার আশংকার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন ছাঁটাইকৃতরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলকে সচল রাখতে ব্রিটিশরা সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানা স্থাপন করে। রেলের প্রয়োজনে সব ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরী করতে এ কারখানায় ২৪টি উপকারখানায় কয়েক হাজার মেশিন বসিয়ে প্রায় ১০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্রিটিশদের পতন ও পরে স্বাধীন বাংলাদেশে মিলে দেড়শ বছরের দীর্ঘ সময়ে ক্রমান্বয়ে অবসরের পর কমতে থাকে শ্রমিক। এতে উৎপাদন ব্যাহত হলে ২০১৪ সালে ‘কাজ আছে, মজুরি আছে’ অস্থায়ী ভিত্তিতে ২০০ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়।
এতেও সংকুলান না হওয়ায় ২০২২ সালে আবারও একই নিয়মে ৩০০ শ্রমিক নেয়া হয়। আর স্থায়ী ৬২১ জন ও অস্থায়ী ৫০০ জন শ্রমিক ঈদুল ফিতরের আগে ১০০ টি কোচ মেরামত করা হয়। তারপরেও ২৪টি উপকারখানা বা সোপের মধ্যে কেবল ঢালাই ঘর, পেইন্ট, সিএন ডাব্লু , ওয়াগন, সিএইচআর, কামার শালা, লোকোমেশিন, ইয়াড, মিল রাইট, বয়লার, পিএম, টুল রুম সোপে উৎপাদন চলছে। বাকি ১২ টি সোপ জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। সোপগুলোতে কয়েক শত দামি মেশিন পত্র জনবলের অভাবে অকেজো হয়েছে।
জানা যায়, কারখানার লোক মেশিন সোপের ৩৫ টির মধ্যে ১২ টি মেশিন সচল। বাকিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কারিগরের অভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি মূল্যের মেশিনগুলো অচল হয়েছে বলে জানান সোপের মিস্তিরি মোফাজ্জল হোসেন।
তিনি আরও জানান, এই সোপে স্থায়ী শ্রমিক মাত্র ৮ জন। সামান্য এ জনবল দিয়ে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ৯ জন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেয়। আর এতেই কাজের গতি বাড়ে সোপে।
সাজ্জাদ হোসেন নামে পেইন্ট সোপের মিস্তিরি জানান, বিশাল এ সোপে ৪১ জন নিয়মিত ও অস্থায়ী ৫২ জন মিলে ৯৩ জন কাজ করত। ৮ বছরে অস্থায়ী শ্রমিকরা দক্ষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুতই কাজ উত্তোলন হত। এখন দক্ষদের ছাঁটাই করায় নতুনদের গড়ে তুলতে সময় ব্যয় হবে। এতে উৎপাদন কমবে। যেখানে ৩০ টি আউট টার্ন হত। এখন ৮ থেকে ১০ টি কোচ হবে।
সিএইচআর সোপের ছাঁটাইকৃত অস্থায়ী শ্রমিক আ. সালাম বলেন, ২০১৪ সালে এ কারখানায় অস্থায়ী ভিক্তিতে যোগ দেই। নিজ দক্ষতায় কারিগর হয়েছিলাম। আজ (২৯ এপ্রিল) কারখানায় গিয়ে শুনি চাকরি নেই। চাকরি বিধিনুযায়ী নতুন নিয়োগ পাওয়ার বয়সও নেই। এখন কোথায় যাব? কি করব? আর বাইরে কাজ করে কিভাবে ৫ সদস্যর সংসারে ব্যয় মেটাব?
আবুল হোসেন নামে শ্রমিক বলেন, ‘প্রায় দেড় বছরের প্রশিক্ষণে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছি। এখন চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হল। আবার কখন উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষ ডাকবে? আর বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলে-মেয়েদের ভরোন-পোষণ কিভাবে যোগার করব? ভেবে পাচ্ছি না। আর চাকরি হারিয়ে সকল ছাঁটাই শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় নিপতিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে কারখানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে ৪
বছর শিক্ষাণবিশকাল থাকবে। এ প্রশিক্ষণকালীন সময়ে রেলওয়ে কারখানায় কাজের গতি তেমন বাড়বে না। তাই দেশের রেলব্যবস্থাপনা সঠিক রাখতে অবশ্যই অস্থায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে হবে। না হলে লোকসানে ধুঁকতে থাকা রেল সহজে দাঁড়াতে পারবেনা।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ঠিক ছাঁটাই নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুনরায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দক্ষদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। নতুনদের সময় লাগবে।
এআরএস