বিলুপ্তির পথে গরুর হাল

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম

বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালন করা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল চাষ। প্রান্তিক চাষিরা জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপনের জন্য জমির মাটি চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ব্যবহার করা হতো আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। 

কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী পুরনো যন্ত্র গরুর হাল। কৃষি জমি আবাদের উপযোগী করার জন্য ষাঁড় ও মহিষের প্রয়োজন হতো। লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করতে প্রয়োজন একজন লোক (কৃষক) ও এক জোড়া গরু অথবা মহিষ।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল-জোয়াল, মই, গরু ও মহিষ। তবে এখন আর দেখা যায় না কাঁধে লাঙ্গল- জোয়াল, হাতে জোড়া গরুর দড়ি। এক সময় গ্রাম বাংলায় স্বাভাবিক চিত্র ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। 

অথচ আজ আধুনিক কৃষি যন্ত্রের আধিপত্যের ফলে ঐতিহ্যবাহী গরু হাল এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ গরুর হাল বিলুপ্তির পথে। বর্তমান যন্ত্রনির্ভর এ যুগের কৃষকরাও ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করেন। অথচ দুই যুগ আগেও দেশের বিভিন্ন জেলার ও উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা গরু পালন করতো হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ফতেখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে পেশা হিসেবে বেঁচে নেওয়া এক কৃষক নয়া মিয়া (৫৫) জমিতে হালচাষ করছেন। এই প্রবীণ কৃষকের সাথে কথা বললে জানান, ছোটবেলা থেকে হাল চাষের কাজ আসছি। হালচাষের চাষের জন্য দরকার ১ জোড়া বলদ গরু, কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, পান্টি, গরুর মুখের লাগাম ইত্যাদি।

আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে সেই জমিতে ঘাস কম হতো। জমির উব্বরতা বাড়ে। হালচাষের সময় গরুর গোবরের জৈব সার জমিতে পড়লে ক্ষেতে সব ধরণের ফলন ভালো হয়। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত হাল করলে জমির মালিকদের দিতে হয় ৫০০ টাকা। এভাবে তারা বাপ-দাদার পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন।

পূর্ব শিবরাম গ্রামের কৃষক কঙ্কন সরকার জানান, তাদের বাড়িতে এক সময় হালচাষ হতো গরু ও মহিষের হাল দিয়ে। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে ৪ থেকে ৫ জোড়া গরু ও মহিষের হাল ছিল। এছাড়াও আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু ও মহিষ লালন-পালন করা হতো। 

গরুগুলো যেন পরিবারের একেকটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে একরের পর একর জমি চাষ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। খড়, তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈল-ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে জমি চষে বেড়াতেন কৃষক। দেশে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ গরু ও মহিষের হাল বিলুপ্তির পথে।  

জরমনদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার রায় জানান, আগে হাল চাষের মৌসুমে তাদের কদর ছিল অনেক। কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, গরু দিয়ে হাল চাষ আমাদের দেশের একটা ঐতিহ্য বহন করে। তবে বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার হচ্ছে। 

পাওয়ার টিলার ও  ট্রাক্টর মাটির গভীরে যেতে পারে। এটি দিয়ে জমি চাষ করা ভালো এবং আগের তুলনায় এখন ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে একরের পর একর জমি চাষ করা যাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। 

এইচআর