* মঙ্গলবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চুড়ান্ত তালিকা
* পুর্ণঃবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে মঙ্গলবার* মোখার ক্ষতচিহ্ন স্বাভাবিক করার চেষ্টা দ্বীপবাসীর
মোখার আঘাতে লণ্ড ভণ্ড প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। জনজীবনে মোখার ক্ষতচিহ্ন স্বাভাবিক করার চেষ্টায় থাকলেও পুণবাসন না হওয়ায় আকাশের নিচে থাকছে অনেককে। দ্বীপের সবচেয়ে বড় বাজার যেখানে আনুমানিক সাড়ে ৩ শত দোকান থাকলেও পাকা দোকানগুলো অক্ষত আছে আধা পাকা এবং টিন শেড দোকানের ছাউনী উপড়ে গেছে। কিছু কিছু দোকান ভেঙ্গে গেছে আংশিক।
সোমবার (১৫ মে) বিকাল ৫ টার দিকে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকরা কিছুটা ভাঙ্গা অংশ সংস্কারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাজারের কয়েকটি দোকানও খুলেছে। যে দোকান ঘীরে মানুষের আনাগোনা বলে দিচ্ছে প্রয়োজনীয় মালামাল বা উপকরণ কিনছেন দ্বীপের মানুষ।
অপর ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানিয়েছেন, বাজারের দেড় শতাধিক দোকান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটির বাজার হয়ে পশ্চিম পাড়ার সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে রয়েছে গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার অস্তিত্ব। যদিও এর মধ্যে সড়ক থেকে গাছ কেটে চলাচল উপযোগি করা হয়েছে। তবে সড়কের দুই পাশে অবস্থিত আধা পাকা ঘর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ছোট্ট মানের কটেজ আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্য দেখা মিলে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে সড়কে ভেঙ্গে যাওয়া গাছ সরিয়ে চলাচলের উপযোগি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্বীপে এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। বিকাল ৫ টায় উর্ধ্বতন দলটি দ্বীপ থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিয়েছেন। দ্বীপের সার্বিক চিত্র তারা দেখেছেন, ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণও তাদের জানানো হয়েছে।
এই জনপ্রতিনিধি জানান, দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচের রয়েছেন।
পশ্চিম পাড়া এলাকার রফিকুল হুদা নামের এক জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরে জীবিকা পরিচালনা করেন তিনি। স্ত্রী, ৩ সন্তান নিয়ে সংসার। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন ঘরটি ভেঙ্গে গেছে।
কোনারপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন নামের এক যুবক জানান, পুরো দ্বীপ এখন শ্রীহীন হয়ে উঠেছে। আগের অবস্থায় ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে।
কোনারপাড়ার কটেজ মালিক আবু তালেব জানান, ১০ কক্ষের কটেজের টিন উড়ে গেছে। একটি অংশও ভেঙ্গে গেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ১২ শত ঘর ও কটেজ ভেঙ্গে গেছে। তার মধ্যে ১ হাজার বসত ঘর। এসব ঘরের মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। জেলা প্রশাসক সোমবার দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকানো খাবার বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতা ইউনিয়নের পক্ষে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দ্বীপের ২ হাজারের বেশি গাছ ভেঙ্গে গেছে। এর মধ্যে সড়কের গাছ পরিষ্কার করে চলাচল উপযোগি করা হয়েছে।
বিকাল ৫ টার পর পর জেটি ঘাটে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চ‚ড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পুর্ণঃবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে মুল আঘাত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এর বাইরে টেকনাফ উপজেলায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১ হাজার ঘর, টেকনাফের অন্যান্য উপক‚লীয় এলাকায় ৩ হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
এআরএস