দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নরসিংদী, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুরের পৃথক পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নরসিংদীতেই মারা গেছেন পাঁচজন। এছাড়া, পাবনায় দুইজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, সুনামগঞ্জে একজন ও চাঁদপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬ জন। আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নরসিংদী : নরসিংদীতে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৩ মে) সকাল থেকে ভারী বর্ষণসহ অতিমাত্রায় বজ্রপাতে জেলার রায়পুরা, মনোহরদী, শিবপুর ও সদর উপজেলার পৃথক পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন-রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন্নাহার (৪৫), একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২), মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে প্রবাস ফেরত রায়হান মিয়া (২৫), নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়া মহল্লার শুকমার রায়ের ছেলে শুপ্তকর (১৪) ও শিবপুরের দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০)। মৃতদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, দুপুর ২টার দিকে রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুরে বাড়ির সামনের মাঠে ফুটবল খেলছিলেন কয়েকজন কিশোর। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে জাবেদ মিয়া আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে শিমুল (১১), হোসেন মিয়ার ছেলে রিয়াজুল (১২) ও শাহ আলমের ছেলে হাসান (১১) আহত হয়। নিলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম বলেন, বাচ্চারা মাঠে ফুটবল খেলছিলো। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খেলতে গিয়ে এমন বাচ্চা মারা যাওয়ায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে দুপুরে মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামে বাড়ির পাশের ঈদগাঁহ মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাতার থেকে ৩ মাসের ছুটিতে আসা রায়হান। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফ মাহমুদ খাঁন বাহালুল জানান, রায়হানের বাবাও কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলো। আজকে সে বজ্রপাতে মারা গেলো। আমরা তার মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে আসার জন্য চেষ্ঠা করছি।
এছাড়া নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়া মহল্লার পুকুরে গোসল করতে গেলে বজ্রপাতে মারা যায় শহরের সাঠিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শুপ্তকর (১৪)। এদিকে, মাঠে কাজ করা অবস্থায় বজ্রপাতে মারা যান শিবপুরের দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০)। এর আগে সকালে খড়ের গাদা তৈরি করার জন্য বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে খড় আনতে যান শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের সামসুন্নাহার। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা সামসুন্নাহারের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরবর্তীত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, খড় আনতে বাড়ির পাশে জমিতে গিয়েছিলেন শামসুন্নাহার। এ সময় বজ্রপাতে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই
পাবনা : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাঠে কাজ করা অবস্থায় বজ্রপাতে ২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে ধান কাটার সময় এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন-চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)। এ সময় বজ্রপাতে আরও অন্তত ১৩ জন আহত হন। আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন ১৫ জন শ্রমিক। ওই এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের একটি উন্মুক্ত খোলা ঘরে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাতে ওই ঘরে অবস্থান করা ৫ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। এ সময় অন্যান্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সন্ধ্যায় বেতুয়ান গ্রামের আহত ৫ শ্রমিকসহ বজ্রপাতে আহত উপজেলার ছোট বিষাকোল ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার আল্লাহবাদ গ্রামের আরও আটজনকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেই সঙ্গে আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান বলেন, নিহতদের উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। আহতদের ব্যাপারে সার্বিক খোঁজখবর ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সোনাতলা গ্রাম ও মানিকপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামের এক ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মোজাম্মেল হক ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে মিত্র চাকমা জানান, দুপুরে উপজেলার মানিকপুরে জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মনু মিয়া নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে নদীপথে ট্রলারে ধান পরিবহনের সময় বজ্রপাতে ওমর মিয়া (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে ধর্মপাশা উপজেলার ৪ নং জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের সীমের খাল (বরাইয়া) নদীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। মৃত ওমর মিয়া ধর্মপাশা উপজেলার বাদে হরিপুর গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে। ওমর জয়স্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। আহতরা হলেন, বাদে হরিপুর গ্রামের শাহীন, কালাচান ও আবুল কাশেম। পুলিশ জানায়, সকালে ধর্মপাশা থানাধীন ৪নং জয়শ্রী ইউনিয়নের অন্তর্গত বাদে হরিপুর গ্রামের সীমের খাল (বরাইয়া) নদীতে
ট্রলারযোগে ধান নিয়ে যাওয়ার সময় বজ্রপ্রাতে ওমর নৌকা থেকে নদীর পানিতে পড়ে যায়। দুই ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর মাছ ধরার জাল দিয়ে ঝলসানো অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও ৩ জন বজ্রপাতের তীব্র শব্দে আহত হন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, সকালে ধান নিয়ে মধ্যনগর যাওয়ার পথে ট্রলারে বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছে। সঙ্গে থাকা আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছেন। নিহতের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর : চাঁদপুর সদর উপজেলায় বজ্রপাতে মো. হাছান মিজি (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার ৫ নং রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোটসুন্দর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত হাছান মিজি ওই গ্রামের গফুর মিজি বাড়ির মৃত মো. কলোমদ্দিন মিজির ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন। চাঁদপুর সদর মডেল থানা পলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আল মামুন পাটওয়ারী জানান, দুপুরে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে নিজ বসতবাড়ির বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আরএস