নওগাঁর মহাদেবপুরে পানি সরবরাহের ১৮টি প্রকল্প অর্ধেক বাস্তবায়নের পর দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে। প্রকল্প শুরুর দুবছর পার হলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থানীয়রা সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতবছর। একবছর বাড়িয়েও তেমন কোন কাজ হয়নি। বিস্তর টাকা ব্যয় করে হাতে নেয়া প্রকল্পগুলো আদৌ চালু হবে কিনা তা কেউ বলতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ বলছেন ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২০১৯-‘২০ অর্থবছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কমিউনিটি বেসড ওয়াটার সাপ্লাইয়ের আওতায় সারাদেশে পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়। ২০২৫ সালে এটি শেষ হবে। এর আওতায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ২০২১-‘২২ অর্ধবছরে ১৮টি প্রকল্প শুরু করা হয়। প্রতিটির জন্য তিন লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৬৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাব মার্সিবল পাম্প বসানো, উঁচু ট্যাঙ্কি স্থাপন, প্লাম্বিং করে প্রতিষ্ঠানে পানি সরবরাহের পাইপ লাইন স্থাপন, হাউস ওয়ারিং, ট্যাপ বেসিন প্রভৃতি স্থাপন করে পানি সরবরাহ চালু করতে হবে। এই উপজেলায় কাজটি পান টাঙ্গাইলের মেসার্স সাখাওয়াত হোসেন জয়। গতবছর ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই পর্যন্ত মাত্র ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। করোনাকালীন সময়ের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে প্রকল্পটি শেষ করতে আরো একবছর সময় দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আরো মাত্র ১০ ভাগ কাজ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আরো অর্ধেক। আগামী ৩০ জুন শেষ হবে দ্বিতীয় মেয়াদে বাড়ানো সময়। এই সময়ের মধ্যে কোনক্রমেই প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এই প্রকল্পে শুধুমাত্র সাব মার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে ও পানির ট্যাঙ্কি রাখার উঁচু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খুরশিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি চালু হলে হাসপাতালের রোগীদের বিশুদ্ধ পানীয় জল প্রাপ্তি সহজ হতো। কিন্তু প্রকল্পটি আদৌ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। উপজেলা সদরের হোসেনপুর মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায় এখানকার প্রকল্পটিরও একই অবস্থা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮টি প্রকল্পই এই অবস্থায় থমকে আছে।
জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী আল হাসিব পরাগ জানান, ৩০ জুনের পর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জামানত বাজেয়াপ্ত, কালো তালিকাভূক্ত করাসহ আরো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই কথা জানান, এই অধিদপ্তরের নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম।
একটি বিশস্ত সূত্র জানায়, কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারের কাছ থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী প্রকল্পটি অবৈধভাবে কিনে নিয়ে কাজ করছেন। জানতে চাইলে মোবইলফোনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
আরএস