বর্ণাঢ্য আয়োজনে কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন

ইসলাম রকিব, চুয়াডাঙ্গা প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ১০:৩৮ এএম

স্কুলজীবনের স্মৃতি ভুলে থাকা সম্ভব নয় 
—আলী আজগর টগর এমপি

শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত 
—হাশেম রেজা

মানুষ তার অতীতকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যৎকে সন্ধান করতে থাকে। ভবিষ্যতে ভালো কিছু হলেও তার অতীত যত দুর্বলই হোক না কেন সেই অতীতকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। বিশেষ করে স্কুলজীবনের স্মৃতি ভুলে থাকা সম্ভব নয়— উপরোক্ত কথাগুলো বলে আবেগাপ্লুত দামুড়হুদার ঐতিহ্যবাহী কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আবেগকে আরও ঘনীভূত করে তোলেন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ আলী আজগর টগর এমপি। 

গত ১ জুলাই প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে জমকালো আয়োজনের ওই শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এলাকার সাধারণ মানুষ ও ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়স্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের লোগোখচিত টি-শার্ট পরিহিত তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও জাতীয় দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্য ডেইলি পোস্টের সম্পাদক-প্রকাশক হাশেম রেজা। সকাল ৯টায় বিদ্যালয় চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কার্পাসডাঙ্গা বাজার হয়ে বিদ্যালয় চত্বরে এসে শেষ হয়। এর আগেই বিদ্যালয় চত্বরে বর্তমান শিক্ষার্থীরা রজনীগন্ধার স্টিক নিয়ে অপেক্ষা করছিল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী এ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়ার জন্য। ফুলেল শুভেচ্ছায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বরণ শেষে প্রধান অতিথি আসা মাত্রই জাতীয় পতাকা, শতবর্ষ উদযাপনের লোগোখচিত পতাকা ও বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় শিল্পীদের গাওয়া জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ আলী আজগর টগর এমপি। 

শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের লোগোখচিত পতাকা উত্তোলন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি হাশেম রেজা। বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন।

পতাকা উত্তোলন পর্ব শেষে শান্তির প্রতীক শ্বেত কবুতর অবমুক্ত ও বেলুন উড্ডয়ন করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা। এরপর প্রধান অতিথি আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে আগমন করেন শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা হাশেম রেজা। প্রধান অতিথিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি হাশেম রেজা। এ ছাড়া মঞ্চে উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন বিদ্যালয়ের ১৯৯৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও আসন গ্রহণ শেষে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের পরপরই শতবর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি আলী আজগর টগর এমপি। এরপরই প্রধান অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথি মিলে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের ১০০ পাউন্ড ওজনের বিশাল আকৃতির কেক কাটেন। এ সময় আবহাওয়ার কণ্ঠে বাজতে থাকে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মনমাতানো থিম সং। 

এরপর বক্তৃতা পর্বে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্য ডেইলি পোস্টের সম্পাদক-প্রকাশক হাশেম রেজা স্বাগত বক্তব্য দিয়ে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মন জয় করেন। তিনি বলেন, আমরা নাড়ির টানে এবং ভালোবাসার টানে এই বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি ১৯৯৪ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। আমি বিশ্বাস করি পরবর্তীতে হয়তো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির দেড়শ ও ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হবে। তবে আমি এই ধারা শুরু করতে পেরে অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করে অনেক জ্ঞানীগুণী ও টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষ তৈরি হয়েছে কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর বা শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজনে এগিয়ে আসেননি। আমি এ আয়োজন করতে পেরেছি বলে এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

বক্তৃতা পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, দর্শনা পৌরসভার মেয়র আতিয়ার রহমান হাবু, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান, চুয়াডাঙ্গা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন ও বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষকরা। বক্তৃতা পর্ব উপস্থাপন করেন দৈনিক আমার সংবাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি ইসলাম রকিব, খ্যাতিমান উপস্থাপিকা খন্দকার নুসরাত জাহান ও বজলুল কবীর। আলোচনা পর্ব শেষে প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুরের লাঞ্চ করে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণপর্ব চলতে থাকে। স্মৃতিচারণ পর্বে অংশগ্রহণ করেন বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের অনেকেই জামাই-মেয়ে,  ছেলের বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয় আঙিনা ভরিয়ে তোলেন। এরপর অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যার পর। জমকালো দেশি-বিদেশি লাইটিং আর সার্কুলেটিং লাইটিংয়ের তালে তালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ পর্বের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ বেতার এবং চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপার উপস্থিতি এবং দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী গান পরিবেশন। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপার গান শুনতে শুনতে সঙ্গীত অনুষ্ঠানে আসা দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো হয়ে যান। রাত কখন ১টা পার হয়েছে কেউ যেন বুঝতেই পারেনি।

সঙ্গীত অনুষ্ঠান শেষে আগত শ্রোতা ও দর্শকমণ্ডলী বলতে থাকেন— হাশেম রেজার কল্যাণে আমরা এই অজপাড়াগাঁয়ে কনকচাঁপার মতো বিখ্যাত শিল্পীর উপস্থিতি ও তার গান শুনতে পেলাম। একই সাথে এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপনে অংশীদার হতে পারলাম। যে প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৩ সালে তৎকালীন শিক্ষানুরাগী কৈলাস কামিনী রায়ের উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছিল।