বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবি, নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

সিরাজদীখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের একটি ট্রলার ডুবে মর্মান্তিক নিহতের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পযর্ন্ত ৭জনের লাশ উদ্ধার করেছে লৌহজং ফায়ার সার্ভিস। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩জন। তারা হলেন- আরিফ হোসেনের ছেলে ও মেয়ে তোরান (৭), নাবা (৪), শেখ মো. রুবেলে ছেলে মাহির শেখ।

নিহতরা হলেন- উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের লতব্দী গ্রামের শাজাহানের স্ত্রী মোকছেদা বেগম (৪০), খিদিরপুর গ্রামের জাহাঙ্গির আলমের স্ত্রী এপি আক্তার (২৮) ও দুই ছেলে সাকিবুল (১০), সজিবুল (৪), আব্দুল হাকিমের মেয়ে পপি আক্তার (৩০), শাহাদাত হোসেনের মেয়ে রোজা মনি (৪মাস), ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ান (৮)। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

রোববার সকাল ৯ থেকে ২টা পযর্ন্ত খিদিরপুর জামে মসজিদে ৫জনকে জানাজা নামাজ শেষে কবরস্থানে দাফন করানো হয়। আরো দুইজন ময়নাতদন্তের জন্য এখনও দাফন করা হয়নি।

 

প্রত্যক্ষদর্শী লতাব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, গত শনিবার সকাল ৮ টার দিকে লতাব্দী ইউনিয়নের নারী-শিশুসহ ৪৬ব্যক্তি ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে পিকনিকে যাই। পিকনিক শেষে আসার সময় ট্রলারটি তালতলা- গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতব্দী দিকে যাচ্ছিল। রাত সোয়া ৭ টার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অনেকেই পানি থেকে সাঁতরিয়ে উপরে উঠতে পেরেছে, অনেকেই উঠতে পারেনি। এরমধ্যে আমার শালির দুই বাচ্চা এক ছেলে ও এক মেয়ে তোরান (৭),নাবা (৫) এখনও নিখোঁজ রয়েছে। আমার শালি বেচে ফিরে এসেছে। এখন আমার শালি কান্না করতে করতে কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন আকাশ বলেন, আমার বংশের ৭ জন নিহত হয়েছে। আমার বড় ভাইয়ের শালি এবং আমার চাচাতো ভায়ের ছেলে ও মেয়েসহ মোট ৩জন নিখোঁজ রয়েছে। আমাদের পরিবারের অবস্থা মোটেও ভালো নেই, খুবই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল। যতটুকু জানি আমাদের সিরাজদীখান উপজেলা থেকে বালু রেখে এই বাল্কহেড যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটায়। এই উপজেলায় এই বাল্কহেড চলাচল নিষেধ, কিন্তু অবৈধ ভাবে চলাচলের কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। বাল্কহেড গুলো বেপরোয়া ভাবে চলাচলের কারণে মাঝে মধ্যে এরকম দুর্ঘটনা ঘটে এবং এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলো। আমি চাই অবৈধ এই বাল্কহেড গুলো প্রশাসন আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই আমাদের দাবি।

এদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার লৌহজংয়ে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি 
ভাসমান একটি ক্রেনের মাধ্যমে নদীর তলদেশ থেকে তোলা হয়। তবে ট্রলারে নিখোঁজ কারও মরদেহ পাননি উদ্ধারকারীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে ট্রলারটি উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা ট্রলারটির উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া স্থান থেকে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে।

ওবায়দুল করিম খান বলেন, ট্রলারটি থেকে কয়েকটি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। তবে কারও লাশ পাওয়া যায়নি। স্বজনদের দাবি, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো ৩জন শিশু নিখোঁজ রয়েছেন।

ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে নিহতের রুহের মাগফেরাত কামনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম তানভীর দোয়াও মোনাজাতের আয়োজন করেন। রোববার বাদ জোহর উপজেলা মডেল মসজিদের এ দোয়াও মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা মডেল মসজিদের  ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান।

এ-সময় মুসল্লী সহ উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারি এই দোয়াও মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করেন।

এআরএস