মির্জাগঞ্জে অফ-সিজনের তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

কামরুজ্জামান বাঁধন, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ০৪:৩৯ পিএম
তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে অফ-সিজনের তরমুজ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সবজি ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা পতিত জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তারা অসময়ের তরমুজ চাষ করছেন। তরমুজ গ্রীস্মকালীন ফল হলেও এবার মির্জাগঞ্জে এ ফল চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তারা। এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মির্জাগঞ্জের ৩ কৃষক। অসময়ে তাদের চাষকৃত রং-বেরংয়ের তরমুজ শোভা পাচ্ছে মাঁচাতে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অসময়ে উপজেলার প্রায় ১ হেক্টর জমিতে সাইদুর, সুদীপ ও সমির অধিকারী নামের তিন কৃষক মাচান পদ্ধতিতে সাগর কিং, কালাচান, রংধনু, গোল্ডেন কিং সহ বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু তরমুজের আবাদ করেছেন। উচ্চমূল্যের অফসিজন তরমুজ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন তারা। সারা বছরই এখন চাষ হবে উচ্চমূল্যের অফসিজন তরমুজ। এসব তরমুজ দেখতে গাঢ় সবুজ। আর তরমুজ কাটলে ভেতরে লাল আবার হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। এই তরমুজ খেতেও ভালো এবং বেশি দামে বিক্রিও করতে পারবেন কৃষকরা। এক সময় বছরে তিন মাস বাজারে তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন সারা বছরই মিলবে এই সুস্বাদু তরমুজ। 

কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক সমির অধিকারী নিজ ক্ষেতে তরমুজ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তরমুজের মাচার নিচে সারি সারি রং-বেরংয়ের তরমুজ ঝুলে আছে। বালাই মুক্ত রাখতে তরমুজ বাগানে ফাঁদ বসানো হয়েছে। গত জুন মাসের শুরুতে তরমুজের চারা রোপণ করেন এবং যখন ফুল থেকে তরমুজ ধরতে শুরু করে ঠিক তখনই বাঁশ দিয়ে তিন ফুট উঁচু মাঁচা তৈরি করা হয়েছে। তরমুজ গুলোকে নেটের ব্যাগ দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। পতিত জমিতে বাঁশের মাচার ওপর নেটের ছাউনি দিয়ে চাষ করা হয়েছে বাহারি জাতের এ তরমুজ। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের সহযোগিতায় আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজের চাষাবাদ করা হয়েছে। সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের তরমুজের ফলনও বেশ ভালো। 

আরেক কৃষক উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, আমার পতিত ৫০ শতাংশ জমিতে মাচা দিয়ে কৃষি অফিসারের সহায়তায় ও পরামর্শে রঙিন তরমুজের আবাদ করেছি। তরমুজ গাছের বয়স প্রায় তিন মাস। বর্তমানে তরমুজের ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি। কিছুদিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রি শুরু হবে। 

কিসমত ছৈলাবুনিয়া গ্রামের সুদীপ কুমার বলেন, ‘অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষিতে আমরা নতুন কিছু করে দেখাতে পেরেছি। পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজের এ বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সফল হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আরাফাত হোসেন বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ থেকে ওই তিনজন কৃষককে সার্বিক সহায়তা ও তাদের বিনামূল্যে সার, বীজ এবং পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। উন্নত জাতের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের অফ-সিজন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং কৃষকরা এ তরমুজ চাষ করে সফলও হয়েছেন। তরমুজ একটি অর্থকরী ফসল। তরমুজ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক ভাবে বেকার যুবক ও কৃষককে স্বাবলম্বী করে তুলতে তরমুজ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হবে।

আরএস