শিশু-কিশোরের হাতে অবৈধ লেগুনার স্টিয়ারিং!

হাসান ভুঁইয়া, (ঢাকা) আশুলিয়া প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৩, ০৪:৩২ পিএম

রুট পারমিট বিহীন বিপদজনক এক যানের নাম লেগুনা। পুরাতন মাইক্রোবাস কেঁটে তৈরি এই লেগুনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আশুলিয়ার অন্তত ৪টি সড়কে। আনফিট লেগুনা আর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা এখন এই সড়কের আতংক। তাও আবার এগুলোর বেশিরভাগ চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। শুধু কি তাই, এসব যান চালকদের সহকারীরাও কোমলমতি শিশু।

লেগুনার এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর চালকরা মাঝে মধ্যেই সড়কে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করে বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। যার কারণে মাঝেমাঝেই দূর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়ও এ সকল লেগুনায় যাত্রীদেরও বাদুর ঝোলার দৃশ্যও কিন্তু নতুন নয়। আর এমন সব ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনি গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। সড়কেও চলছে বছরের পর বছর, তবুও যেন দেখার কেউ নেই।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর ও নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়ক ঘুড়ে জানা গেলো এমন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। শুধু এই দুই সড়কই নয়, সিএন্ডবি টু আশুলিয়া বাজার এবং নবীনগর টু ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার পর্যন্ত চলাচলরত লেগুনার বেশিরভাগ সড়ক আশুলিয়ায় পড়েছে। মাঝে মধ্যেই এ সকল গণপরিবহনের সহকারী ও ড্রাইভারসহ আরও ৩/৪ জন মিলে যাত্রি উঠে নিয়ে যাচ্ছে অজানা ঠিকানায়। পথে মধ্যে জোরপূর্বক ধর্ষন, টাকা, মালামাল লুটপাতসহ মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। এ ধরনের ঘটনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে চেতনানাশক বিভিন্ন ঔষধ, বিষাক্ত মলমসহ দেশীয় অস্ত্র।

জানা যায়, আশুলিয়ার এই চার সড়কে অন্তত তিন শতাধিক লেগুনা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডোগায় এভাবে চলাচল করলেও এসব যানবহনের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না।

আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলা একটি লেগুনার পেছনে ছুটে দেখা গেলো তা চালচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোর, নাম তার অনিক। আনুমানিক বয়স ১৫ বছর। এমনকি তার সহকারীও একজন কোমলমতি শিশু। চলন্ত গাড়ির পিছনে ঝুলে আছে বেশ কয়েকজন যাত্রী। এছাড়ও চালকের পাশেও বসা একাধিক যাত্রী। শুধু পাদানিতে দাড়িয়ে ভাড়া আদায় করছে সহকারী শিশুটি। চালক যখন-তখন ব্রেক ধরছে আবার মাঝে মাঝে বেশ জোরে টান দিচ্ছে। এর পরে কার আগে কে যাবে তা নিয়ে মেতে উঠছে গতির লড়াইয়ে।

শুধু অনিক, জসিম কিংবা ইয়াছিন নয়, এই চার সড়কে চলাচলরত অন্তত শতাধিক লেগুনার চালকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিভাগ শিশু-কিশোর পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে বন্ধু কিংবা পরিবারের হাত ধরে এসে হেলপারিতে যোগ দেয়। ২/৩ বছর হেলপারি করার পরে ওস্তাদের নিকট থেকে গাড়ী চালানো শিখে যায়। পরে তারা নিজেরাই চালাতে শুরু করে। বয়স কম থাকায় লাইসেন্স করা সম্ভব হয় না।

নরসিংহপুর থেকে বাইপাইলে আসা মাসুদুর রহমান বলেন, এই লেগুনা চালকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা অন্য কোনো গাড়িকে সাইড দিতে চায় না। নিজেদের ইচ্ছামত গাড়ি চালায়। মাঝে মাঝে ঝুঁকি নিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে টান দেয়, যার ফলে গাড়ী উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাক। এছাড়াও যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করে। যেহেতু এটা শিল্পাঞ্চল, সেহেতু গণপরিবহনের স্বল্পতার কারণে জীবনের ঝুকি নিয়েই এ ধরনের পরিবহনে উঠতে হয়।

সাথী আক্তার নামের এক যাত্রী জানান, লেগুনাতে চলাচল করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। এরা যে পরিমান ছিট থাকে তার থেকে বেশি লোক উঠায়। যার ফলে অনেক লোকজনের সাথে ধাক্কা লাগে। ওদের লাইসেন্স আছে কিনা জানি না। এদের বেশির ভাগ ড্রাইভারের অল্প বয়স্ক। আমার মনে হয় তাদের লাইসেন্স নাই। যার ফলে রাস্তায় দূর্ঘটনা ঘটে। তাই সব সময় আতংক নিয়ে চলাচল করি।

লেগুনায় শিশু-কিশোরদের ড্রাইভিং বন্ধের ব্যাপারে সাভার ট্রাফিক বিভাগের এডমিন হোসেন শহিদ চৌধুরী দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু পেলে আমরা সব সময় ব্যবস্থা গ্রহন করি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে থাকি এবং রেকারিং এর মত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। এ ধরণের কার্যক্রম আমাদের সব সময় চলছে।

এইচআর