নদীর ওপর টানানো রশি ধরে চালানো হয় নৌকা। খেয়া নৌকায় না উঠতে চাইলে মাত্র ৮০ মিটার চওড়া নদীটির জন্য এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত ১৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। যুগ যুগ ধরে নদী পারাপারে এলাকার মানুষকে এমন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এ চিত্র নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাজলা নদীতে।
এ নদী পার হয়ে মুলিয়া বাজার ও জেলা শহরে যাতায়াতে তিন ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের ভরসা একটি খেয়া নৌকা। বিভিন্ন সময় জন প্রতিনিধিসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজলা নদীতে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, মুলিয়া ঘাটের একটি মাত্র নৌকা দিয়ে কাজলা নদী পারাপার করা হয়। নদীর ওপর টানানো রশি টেনে নৌকাটি চালাতে হয়। এভাবেই বছরের পর বছর নৌকা দিয়ে কষ্ট করে নদী পার হতে হচ্ছে মুলিয়া, শেখহাটি ও তুলারামপুর ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে।
ওই এলাকার মানুষকে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে মুলিয়া বাজারে আসতে হয়। এ বাজারে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ভূমি অফিসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল-বিকেল নিয়মিত বাজার বসে নদীপাড়ের এ বাজারে।
দেবভোগ গ্রামের বিমল বলেন, আমরা রশি টেনে নৌকা পার হই। শুধু আমরা না, সারা জীবন আমাদের বাপ-দাদারা রশি টেনে নৌকা পার হয়েছেন। এ দুর্ভোগের শেষ কবে সেটা কেউ বলতে পারে না।
মুলিয়া গ্রামের নিপেন বিশ্বাস বলেন, কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও কেন সেতু নির্মাণ হচ্ছে না এটা বুঝতে পারছি না। সেতু না থাকায় মুলিয়া বাজার থেকে নড়াইল শহরের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার হলেও ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। এ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ২০ বছর ধরে শুনে আসছি এ নদীতে সেতু হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখছি সেতু নির্মাণের কোনো আলামত নেই। সেতু না থাকায় প্রতি ট্রাক পণ্য আনতে টাকা বেশি দিতে হয়।
মুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ান বলেন, প্রতিদিন তাদের তিন থেকে চারবার নদী পার হতে হয়। এতে তার মতো শত শত ছাত্রছাত্রীর ২-৩ ঘণ্টা নদীপাড়ে বসে থেকে সময় নষ্ট হয়।
স্কুলশিক্ষক সসিম কুমার, সেতু না থাকায় এ এলাকার শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকায় অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত মুলিয়া ও নড়াইল শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণ করা হলে ভোগান্তি কমে যাবে।
নড়াইল চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানউজ্জামান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ ঘাটে সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। সেতু দ্রুত নির্মাণ করা হবে এমনটাই আশাবাদী তিনি।
মুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, একটি মাত্র নৌকা দিয়ে রশি টেনে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ১৫-২০টি গ্রামের অন্তত ৬০ হাজার মানুষ এভাবে কষ্ট করে নদী পার হচ্ছে। প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে ৮-১০ হাজার মানুষ পারাপার হয়। এ ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি।
নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুণ্ডু বলেন, কাজলা নদী মাত্র ৮০ মিটার প্রশস্ত হলেও নদী তীরবর্তী মুলিয়া বাজারের কয়েকশ ব্যবসায়ীর কথা চিন্তা করে এখানে ৪শ মিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ছোট সেতু নির্মাণ করা হলে বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙা পড়বে। সেজন্য একটু বড় করে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এইচআর