কাউনিয়ায় ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব, ২০ গরুর মৃত্যু

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম

রংপুরের কাউনিয়ায় লাম্পি স্কিন রোগের পর হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে গরুর ক্ষুরারোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি গরু মারা গেছে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়ছে আক্রান্ত এলাকার বেশির ভাগ গবাদি পশু। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, লাম্পি স্কিনের পর গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৬ ইউনিয়নে শতশত গরু  ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ে এ রোগের প্রতিষেধক এফএমডি (ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ) ভ্যাকসিন না থাকায় কৃষকরা চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। তবে কাউনিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এ রোগে আক্রান্ত হলে গরুর শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসে, ক্ষুরা ও মুখে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে। এতে গরুর চলাচল এবং খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

পশ্চিম নিজপাড়া গ্রামের কৃষক প্রহলাদ চন্দ্র জানান, তার ১১টি গরুর সবগুলোই ক্ষুরারোগে আক্রান্ত এবং একটি বাছুর মারা গেছে। এতে তার গরু আর দুধ দিচ্ছে না।

নিজপাড়া গ্রামের আকবর আলী জানান, তার ২ লাখ টাকা মূল্যের ২টি গরু ক্ষুরারোগে মারা গেছে। এছাড়া নিজপাড়া গ্রামের কপিলের একটি বাছুর, ভুতছাড়া গ্রামের এমদাদুল হকের একটি, জালাল উদ্দিনের একটি, আলম মিয়ার একটি, কাইয়ুম আলীর একটি, নাজমুল আলমের একটি গরু মারা গেছে।

রবিন্দ্র চন্দ্র জানান, তার খামারের দুধের গরুসহ সবকটি গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হলেও ভ্যাকসিনের অভাবে এখন তারা চিকিৎসা করাতে পারছে না। তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় বেশি দামে অন্যজায়গা থেকে ভ্যাকসিন ও স্যালাইন কিনে গরুর চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

বালাপাড়া ইউনিয়নের মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, নিজপাড়াসহ আসপাশের সব গ্রামে ক্ষুরারোগ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ গ্রামে ক্ষুরারোগ দেখা দেয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকটা দিশেহারা তারা।

কৃষকদের অভিযোগ, যে সব গরু অসুস্থ রয়েছে সরকারিভাবে তারা কোন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিঞ্চিতা রহমান জানান, ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের সহয়তায় বিনামূল্যে ৬৪০টি ভ্যাকসিন দেয়া কর্যক্রম চলমান রয়েছে। যে সব এলাকায় ক্ষুরারোগের খবর পাচ্ছেন সেখানে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। এছাড়া ২০০০ ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে, আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবো।

তিনি আরও জানান, বেশির ভাগ গরু বাজার থেকে এনে আলাদা ভাবে না রাখায় অন্য গরুগুলো আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষক ও খামারীদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিদুল হক জানান, ক্ষুরারোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি হাটে ইজারাদের সতর্ক করা হয়েছে। কাউনিয়ায় ক্ষুরারোগ প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান কৃষক ও খামরিরা।
এআরএস