দুই বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজের কাজ, দুর্ভোগে মানুষ

নয়ন দাস, গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে একটি ব্রিজের নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের মে মাসে। তবে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ গত ২ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর মাত্র ৫ মাসের মাথায় অজানা কারনে থমকে যায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ। এদিকে যথাসময়ে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ১৫ টি গ্রামের মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গাফিলতির ফলে ব্রিজ নির্মাণের কাজ গত ২ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারের লোকজন। অন্যদিকে ঠিকাদার বলছেন, এলজিইডি থেকে ব্রিজটির নকশা পরিবর্তনের কারণে যথাসময়ে কাজটি শেষ করতে পারছেন না তারা। তবে এলজিইডি কর্মকর্তার দাবী, নকশা জটিলতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে চিঠি পাঠানোর পর অনুমোদন হয়ে এসেছে। এরপরে ঠিকাদারকে ব্রিজের কাজটি শেষ করার জন্য একাধিকবার জানানো হলেও এ বিষয়ে কর্ণপাত করছেন না তিনি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার নলমুড়ি ইউনিয়নের চরভুয়াই কালাম দেওয়ান বাজারের খালের উপর সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। পরে সেখানে নতুন করে ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি পিএসসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতুটির চুক্তিমূল্য নির্ধারণ হয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯২০ টাকা। কাজটির দায়িত্ব পায় শরীয়তপুরের নোনা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখে এবং কাজটির সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১৭ মে মাসে। ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে পাইলিং জটিলতার কারনে কিছুদিনের মাথায় থেমে যায় কাজটি। পরবর্তীতে ব্রিজটির নকশা পরিবর্তন করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিল জটিলতার অজুহাতে কাজটি পুরোপুরি সম্পূর্ণ করেনি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোসাইরহাট থেকে আবুপুর যাওয়ার চরভুয়াই কালাম দেওয়ান বাজারের খালের উপর নির্মিত সেতুটির দুটি অংশের পিলার ও পাইলিং করে রাখা হয়েছে। পাকা রাস্তা কেটে পাশ দিয়ে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটিতে কাদা জমে আছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন ও মানুষ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুয়াই বাজারের ব্রিজটি নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় খুনেরচর, আবুপুর, স্কুলেরহাটা, চরপদ্মা, মাদ্রাসাবাজার হাটুরিয়া, হিজলা, মুলাদী, ভেদরিয়া খেয়াঘাট, সফিপুরসহ অন্তত ১৫ টি এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাদের গোসাইরহাট শরীয়তপুরসহ বরিশাল শহরে যেতে হচ্ছে ২৫  কিলোমিটার ঘুরে অন্য সড়ক ধরে।

স্থানীয় চরভুয়াই কালাম দেওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, ব্রিজের দুই পাশেই পাকা সড়ক। শুধু এই ব্রিজের কারনে যানবাহন ও মালামাল পরিবহন করতে পারছি না। এসব ভোগান্তির কারনে লোকজন এখন আর এই বাজারে আসতে চায় না। আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েছি। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান বলেন, বৃষ্টি হলে ব্রিজের পাশে তৈরি করা মাটির রাস্তাটি কাদায় পরিনত হয় এতে আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে যেতে ভোগান্তি হচ্ছে। ব্রিজের কারনে যানবাহন না চলায় তারা চাইলেও সময় মতো স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। অন্তত আমাদের সকলের কথা বিবেচনা করে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ  সম্পন্ন করা হোক।

নলমুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ব্রিজটি দুই বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। যাতায়াতের জন্য বিকল্প রাস্তাটিতে বিপদজনকভাবে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। এসব কারনে সড়কটি ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াতকারী বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। তাছাড়া বিকল্প সড়ক ঘুরে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবী জানাই।

কাজ ফেলে রাখার বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নোনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবু সুফিয়ানের সাথে। তিনি  বলেন, কাজটি পাওয়ার পর বর্ষা মৌসুম চলে আসায় আমরা নভেম্বরে কাজটি শুরু করি। পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজটি করার সময়ে পাইলিং জটিলতার কারনে কাজটি বন্ধ রাখতে হয়। পরবর্তীতে ব্রিজের নকশা পরিবর্তন করা হলে আরো ৬ মাস সময় নষ্ট হয়। নকশা পরিবর্তন করার পরে আমি ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ শেষ করি। তবে তারা আমাকে নতুন কাজের কোনো বিল দেয়নি। তাই আমি বাধ্য হয়ে জুন মাস থেকে কাজ বন্ধ রেখেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সজল কুমার দত্ত বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের স্বার্থে স্ট্রাকচারের নকশায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিলো। তাছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। ওনাকে বারবার কাজটি শেষ করার জন্য ডাকা হয়েছে কিন্তু উনি ইচ্ছে করেই গাফিলতি করছেন। তিনি যদি আগামী ৭ দিনের মধ্যে কাজ শুরু না করেন তবে তার কাজটি ক্যান্সেল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

আরএস