টানা বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জে নজিরবিহীন জলাবদ্ধতা,জনদুর্ভোগ চরমে

আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম

মধ্য আশ্বিনের এমন বৃষ্টি বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এলাকাবাসী দেখে নাই। কিশোরগঞ্জে দু‍‍`দিনের ভারী বর্ষণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরবাসী পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অথচ, জনদুর্ভোগ নিরসনে নেই কোন উদ্যোগ বা পরিকল্পনা। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরবাসীর ক্ষোভের অন্ত নেই।

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে শহরসহ শহরতলী ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কাদাপানি জমে গেছে। পানি নি:স্কাশনের কোন ব্যবস্হা না থাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।দোকানপাট বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্য ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

শুক্রবার ও শনিবার সকালে শহরের ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মেইন সড়ক সহ সব জায়গায় রাস্তাঘাট ও বাসা-বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। ফলে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পানিনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর পৌরবাসী জলাবদ্ধতার সাথে যুদ্ধ করে আসলেও সমস্যা সমাধানে উদাসিন পৌর কর্তৃপক্ষ।

একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ এই দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’

জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেন, ‘শহরের ড্রেনেজ ব্যাবস্থা ভালো না। এছাড়া পৌর এলাকার পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। যে কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় শহরে।’‍‍`শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক নয়। ফলে জনদুর্ভোগ লেগেই আছে’।
এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাট নাগরিকদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়েছে। আখড়াবাজার এলাকার  আলম বলেন, এমন লাগাতার মুষলধার বৃষ্টি জীবনের আর দেখিনি।

এদিকে শুক্রবার বিকালে বৃষ্টি থামলেও রাতে আবার বৃষ্টি হয়।ফলে শহরের বহু সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। এক পথচারী বলেন, ঘরে পানি রাস্তায় পানি। এখন কোথায় যাব বুঝতে পারছিনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের এক বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, চলতি মেয়াদে বর্তমান মেয়র পারভেজ মিয়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে কোন কাজই করেননি। এছাড়া ড্রেনেজ সিস্টেম একটি  কারিগরী বিষয় কিন্তু ঠিকাদার বা পৌর কর্তৃপক্ষ এদিকটায় নজর দেননা বলেই চলে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন,শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সাধ্যমত কাজ করছি।

এদিকে কিশোরগঞ্জে বৃষ্টিতে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় রেললাইন ভেঙে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার মানিকখালি ও হালিমপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় লাইন ভেঙে যায়। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে আড়াই ঘণ্টা ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসা এগারসিন্দুর প্রভাতী সরারচর স্টেশনে আটকা পড়ে।অপরদিকে, ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ছেড়ে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস মানিকখালী স্টেশনে আটকা পড়ে।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আরও জানান, বৃষ্টিতে রেললাইনের মাটি সরে যাওয়ায় মূল লাইন ভেঙে গেছে। লাইন মেরামতের কাজ চলছে।মেরামত শেষে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে শুক্রবার অতি বৃষ্টিজনীত কারণে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় ভৈরব- ময়মনসিংহ লাইনে ট্রেন চলাচল টানা সাত ঘন্টা বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানা গেছে। 

আরএস