রাজনৈতিক নেতাদের দ্বন্দ্ব এবং সমন্বয়হীনতার কারণে শেরপুর জেলার উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করেন জেলার বিশিষ্টজনরা। একইসঙ্গে শেরপুর যে জেলা তা-ই অনেক মানুষ জানে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আলোচকরা।
শনিবার (৭ অক্টোবর) শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়ামে "শেরপুর জেলার পর্যটন শিল্প কলকারখানার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে” নাগরিক ভাবনা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ। তিনি বলেন, কক্সবাজার এলাকার মেরিন ড্রাইভের মতো শেরপুর সীমান্ত এলাকায় করা সড়ক হতে পারে হিল ড্রাইভ। মুঘল আমলে শেরপুর জেলা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম এলাকা। দুঃখজনকভাবে শেরপুরের অনেক নামকরা ব্যক্তি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শেরপুর জেলা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। জেলার উন্নয়নে আমাদের সবাইকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা সভার স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেরপুর জেলা প্রকৃতি, শিল্প কলকারখানা, অর্থনীতি এবং দক্ষ জনশক্তিতে সমৃদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট গভর্নেন্স বাস্তবায়ন করা গেলে শেরপুর জেলায় খুব দ্রুত তার সাথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা আমাদের চাহিদা সরকারের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। কিছু কিছু প্রশাসনিক ভৌত অবকাঠামো গড়ে ওঠা ছাড়া মূলত স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট জনশক্তি তৈরি করার মতো কোনো কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের সব চাইতে বড় পাহাড় সমৃদ্ধ জেলা হলেও এ জেলায় পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কিছুই হয়নি। পর্যটনের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রচার কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে না।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, শেরপুর জেলা পরিচয় হতে পারতো মতিয়া চৌধুরীর জেলা কিংবা আতিউর রহমানের নামে। কিন্তু এটি যে একটি জেলা, এটাই অনেকেই জানে না। বড় দুই নেতার দ্বন্দ্বে এবং সমন্বয়ে না থাকার কারণেই শেরপুর জেলার উন্নয়ন হয়নি।
এ অবস্থায় তিনি শেরপুর জেলা উন্নয়ন পরিষদ এবং নাগরিক সমাজের ব্যক্তিদের দুই নেতাকে এক টেবিলে বসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে শিল্প উন্নয়নে তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেরপুর জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া বলেন, পর্যটন এলাকার সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শেরপুর জেলায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি জন্মেছিল, কিন্তু তাদের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। ত্যাগী ব্যক্তিদের আমরা স্মরণ করি না বলেই আমরা আজ উন্নয়ন থেকে অনেক পিছিয়ে।
শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শহীদুল ইসলাম বলেন, শেরপুর জেলার মানুষের চাহিদার অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কোনো মেডিকেল কলেজ। তাই সবার আগে শেরপুর জেলায় সদরে একটি মেডিকেল কলেজ অত্যন্ত জরুরি।
সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী এডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) বলেন, সত্যিকার অর্থে শেরপুর জেলায় বড় বড় নেতা হওয়ার কারণে শেরপুর এত পিছিয়ে। তাদের স্থলে ছোট নেতা থাকলে এতদিন অনেক উন্নয়ন হত। আমরা এসব বড় নেতাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দিতে চাই। এসব নেতাদের এখনো সুযোগ আছে। তারা উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে দেখাক।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, শেরপুর সদরে এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট এর মূল জমির পরিমাণ ৪৩ একর যার অর্ধেক অব্যবহৃত পড়ে আছে, এই জায়গায় সরকার চাইলেই দুই -দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলতে পারে।
আরএস