মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে-প্রবারণা পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে পার্বত্যমন্ত্রী

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ১২:৩৩ পিএম

বান্দরবান শহরে মারমা সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব মাহা ওয়াগোয়াই পোয়ে ও প্রবারণা পূর্ণিমার প্রথম দিন উদযাপিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মানুষের সুখ ও শান্তি কামনা করে বান্দরবান কালাপাড়া স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থনায় হাজার হাজার ভক্ত ও অনুসারীদের সঙ্গে যোগ দেন।

এসময় পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি পর্যায়ক্রমে বন্দনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল, দেশনা, দানীয় সামগ্রী বিতরণ, বৌদ্ধ ধ্বজ উত্তোলন ও হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে অংশ নেওয়ার পর চুলামণী জাদীর উদ্দেশ্যে ফানুস উৎসর্গ করেন।

রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে বান্দরবান শহরের কালাপাড়া স্বর্ণমন্দিরে মারমা সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব মাহা ওয়াগোয়াই পোয়েঃ ও প্রবারণা পূর্ণিমার দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে হাজারো ভক্তকূলের সাথে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বন্দনায় অংশ নেন।

এ উৎসবের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বন্দনা করা হয়। বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রতিটি মানুষের মনে সুখ বয়ে আনার প্রার্থনা করা হয়। প্রাণের মিলনমেলা এই উৎসবের মাধ্যমে যা কিছু সুন্দর; যা কিছু সত্য, তারই বন্দনা করা হয়।

এই উৎসবের মাধ্যমে নতুনভাবে আশাগুলো আবারো সঞ্চারিত হবে এ প্রত্যাশা সকলের মনে। এ উৎসব নব জীবনের নব যাত্রার সন্ধিক্ষণে সকল মানুষকে স্বাগত জানায়। মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে ওয়াগ্যোই মিলনমেলায় সকলে সমবেত থাকার আহ্বান জানানো হয় প্রার্থণায়।

আতশবাজি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুসের ঝলকানি আর ময়ুরপঙ্খীর আদলে তৈরী মাহারথ টানা উৎসবের মধ্যে দিয়ে মাহা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ (প্রবারণা পূর্ণিমা) উদযাপনে মারমা সম্প্রদায়রা মেতে উঠে। উৎসবে বাহারি বর্ণিল ফানুসের উড্ডয়ন, জ্বালানো হয়েছে হাজারো মানুষের হাজারো মোমবাতি, রাতের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি, মন্দিরে ছোয়াইং ও অর্থ দান, বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত সতর্ক ও তৎপর থেকে বান্দরবান শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছিল।

হাজারো ভক্ত অনুসারীর মধ্যে এসময় বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রায়হান কাজমী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আলম, বান্দরবান পৌর মেয়র শামসুল ইসলাম, বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বান্দরবান হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অমল কান্তি দাশ, বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পুলু মারমা, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মানিক, সদর উপজেলার কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান মংপু মারমাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন উপলক্ষ্যে আজ বান্দরবানের সমস্ত জেলা জুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা, চলছে নানা আয়োজন। বিভিন্ন  সুস্বাদু মিষ্টান্ন খাবার তৈরিতে ব্যস্ত মারমা নারীরা। আষাঢ়ের পূর্ণিমার পর থেকে তিন মাস বর্ষাবাস পালন শেষে শুরু ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। প্রতি বছর পূর্ণিমার এই তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পালন করে প্রবরণা পূর্ণিমা, আর প্রবরণা পূর্ণিমাতে মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করে মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।

পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর আজ সোমবার সকাল থেকে মহা মঙ্গল রথযাত্রায় অংশ নিয়ে বান্দরবান শহরের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে সাজ সাজ রব ও উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ ধর্মীয় উৎসব।

এআরএস