টাঙ্গাইলের কালিহাতী পুলিশ স্টেশন এলাকা থেকে চেচুয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়ক (আউলিয়ে) খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে। প্রায় ৯ মাসের অধিক সময় ধরে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে সড়ক এভাবে ফেলে রাখায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ।
কালিহাতী পৌরসভার সাতুটিয় কিছু অংশ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে সড়ক। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এ সড়ক দিয়ে অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। লোকজন কোনোরকমে হেঁটে চলাচল করা-ও সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগণ জানায়, এ সড়কের সাথে সাতুটিয়া, নিচিন্তপুর, ছিলিমপুর, দয়থা, খরুল্লা, ইন্দুটি, লাঙ্গল জোড়া, মহিষ জোড়া, রাণীহাটি, কেন্দুয়া, বলধি, মরাপুরা, বলিখন্ড, গোপালপুর, শিহরাইল, পৌজান, কালিবাড়ী, চেচুয়া, মসিন্দা, এলেঙ্গা ও বালিয়াটাসহ জেলা শহরের মানুষের কালিহাতী উপজেলায় যাতায়াতের জন্য এটি একটি সহজ রাস্তা। একই সঙ্গে সড়কের দু’পাশে দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে। তবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় কয়েক এলাকার মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সমস্যা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মহিষ জোড়া গ্রামের আব্দুল কদ্দুস এবং আলহাজ্ব জলিল জানান, আগের রাস্তা ভালো ছিল। নতুন করে কাজ করার জন্য রাস্তাটি ৯ মাস যাবত খুঁড়ে (আউলিয়ে) রেখেছে সে জন্য আমরা বয়স্ক মানুষ সকালে হাটতে গেলে রাস্তায় হোঁচট খেতে হয়। মহিষ জোড়া থেকে আগে অটোরিকশা ভাড়া ছিল ২০ টাকা এখন ভাড়া দিতে হয় ৩০ টাকা প্রত্যেকটা স্ট্যান্ডে আগের চেয়ে ভাড়া বেশি দিতে হয়। সমস্যার কারণে বিভিন্ন গাড়ি চালকরাও অন্যরুটে গিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।
কেন্দুয়া গ্রামের বাদল চন্দ্র দাস বলেন, রাস্তা যখন ভালো ছিল তখন আমাদের এলাকা সহ পূর্ব দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ অতি সহজেই এলেঙ্গা এবং কালিহাতী যাইতে পারতো রাস্তা ভাঙার পরে গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। সুস্থ মানুষ ভালো ভাবে গাড়িতে বসে থাকতে পারে না অসুস্থ মানুষ কেমনে এই রাস্তায় চলাচল করবে। তাই কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাস্তাটি অল্প সময়ে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
উদ্দীপন এনজিওর মাঠ কর্মি মোটরসাইকেল চালক নকিব জানান, আমি রাস্তা ভাঙার আগেই এই রাস্তায় এসেছি তখন মোটামুটি ভালই ছিল। কিন্তু অনেক দিন যাবত রাস্তার এই অবস্থার কারণে মোটরসাইকেল স্বাভাবিকভাবে চালানো যাচ্ছে না মাঝেমধ্যেই দেখি একটু জুড়ে চালালেই দুর্ঘটনা পরিণত হচ্ছে।
ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম জানান, আমরা গাড়ি চালাই তাতেই বুকে ব্যথা হয়ে যায় প্যাসেঞ্জার তারা বেশি ভাড়া দিতে চাইলেও অনেক সময় আমরা যাইতে চাইনা এ অবস্থায় গাড়ির টায়ারসহ অন্যান্য পার্টস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই রাস্তার দায়িত্বে যারা রয়েছে তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার অনুরোধ করছি।
দয়থা এলাকার একাধিক ব্যক্তিরা জানান, এই রাস্তায় কয়েকটি প্রাইমারি স্কুল এবং নুরজাহান খসরু নামের একটি হাই স্কুল রয়েছেন সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যা এবং স্কুলের সাথে রাস্তা থাকায় ধুলাবালি থেকে বায়ু দূষণ হচ্ছে। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
নুরজাহান খসরু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্ররা জানান, আমরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি মাঝে মধ্যেই রাস্তার এই অবস্থানের কারণে সাইকেলের চাকার সাথে খোয়া লেগে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এবং ধুলাবালি থেকে ঠান্ডার জনিত বিভিন্ন রোগ বালাই হচ্ছে আমাদের।
প্রায় এক কোটি ৭২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী কাজ পান অবনি এন্টারপ্রাইজ। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছর ডিসেম্বরে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করায় সকল সমস্যার কারণ।
অবনি এন্টারপ্রাইজের সত্য অধিকারী হেকমত জানান, পাথরে পানি উঠার কারণে কাজ করতে সময় লাগতেছে। তাড়াতাড়িই কাজ শুরু করা হবে।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি যখন জানতে পারলাম রাস্তার কাজ দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। তাৎক্ষণিক জেলা এক্সচেঞ্জের নিকট চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি কাজ বাতিল করার জন্য। এছাড়া অবনি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরুরিভিত্তিতে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। ঠিকাদার বলছেন খুব শিগরি রাস্তা নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।
এআরএস