রঙিন হাওয়াই মিঠাইয়ে কিশোর সজিবের জীবিকা

বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৩, ০৪:১৬ পিএম

‘হাওয়াই মিঠাই লাগবে, হাওয়াই মিঠাই, মিষ্টি নরম গোলাপি, সাদা হাওয়াই মিঠাই।’  কাঠির মাথায় পলিব্যাগে মোড়ানো গোলাপি-সাদা হাওয়াই মিঠাই। ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়ায় ফেরিওয়ালা।

চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো জাঁতায় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় হাওয়াই মিঠাই। শহর-গ্রাম সবখানেই মেলা বসলেই দেখা মেলে হাওয়াই মিঠাইয়ের।

তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালাদেরও চোখে পড়ে। তারা নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে রঙিন হাওয়াই মিঠাই।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার লড়িবাগ গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জানান, তার কৈশোর বয়সের হাওয়াই মিঠাইয়ের স্বাদের কথা , তিনি আজও ভুলতে পারেননি। এখনো গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা এলে তিনি তা কিনে শিশুদের সাথে মজা করে খান।

তিনি বলেন, ‘যখন দাদা, বাবা কিংবা কাকাদের সঙ্গে গ্রামগঞ্জের হাটবাজার বা মেলায় যেতাম, তখন প্রথম বায়না ছিল এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়া।’

একই গ্রামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘হাওয়াই মিঠাইয়ে পেট না ভরলেও মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা ছোটবেলায় প্রচুর খেতাম । এখন আর খাওয়া হয় না। তবে আমি খাইনা বলে যে কিনি না, তা কিন্তু নয়; এখনো মাঝে মধ্যে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালা এলে দুই নাতির জন্য কিনি। এখন ওরা খুব মজা করেই খায়।

শ্রীমন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘ফেরিওয়ালা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। বাবা কিংবা মাকে টাকা দিতে বলি। একেকটা হাওয়াই মিঠাই মাত্র ১০ টাকা । আমি এক সঙ্গে ২টা  কিনে একটা আমি খাই, আরেকটা আমার ছোট বোনকে দেই। তবে মাঝে মধ্যে খুব বেশি মজা লাগলে আমি দুটাই খেয়ে ফেলি।

ওই শিশুর বাবা বলেন, ‘আমিও আমার বাবার কাছে একই জিনিস খেতে আবদার করতাম এবং বাবা সেটা কিনে দিতেন। এখন আমি আমার সন্তানদের আবদার রক্ষা করি।’

বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা ফেরিওয়ালা সজিব জানান, তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চন্ডিদোয়ার গ্রামে। বর্তমানে সে কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায়  অন্য আরও দুই ফেরিওলার সঙ্গে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

সজিব জানান, একজন মালিকের দায়িত্বে তারা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন। মালিক থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করেন। সকাল ৭টায় বের হয়ে ফেরেন সন্ধ্যায়। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন।

সজিব আরও জানান, প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। এর বিনিময়ে পান মাত্র ৩ থেকে ৪শ’ টাকা। এই টাকা বাড়িতে পাঠান বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য। এক সময় সজিবের বাবা কাজ করতেন। এখন বাবার বয়স হয়েছে বলে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবারের হাল ধরতে কিশোর বয়সেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। এ মুহূর্তে রঙিন হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে চলে তার জীবিকা।

এঅরাএস