অদম্য খাদিজাকে বাইসাইকেল উপহার দিলেন ইউএনও

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

অন্যের ফসলি জমিতে নিরানীর কাজ করে বৃদ্ধ মায়ের ওষধখরচসহ সংসার পরিচালনা করে খাদিজা আক্তার। তার বাইসাইকেল চুরি হওয়ার পর যাতায়াত খরচের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়েছিল তার। কলেজে যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র খাদিজা আক্তারকে একটি বাইসাইকেল উপহার দিয়েছেন।

রোববার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস চত্বরে খাদিজাকে বাইসাইকেলটি উপহার দেওয়া হয়।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার উপরগাঁও এলাকার কীর্তিনাশা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মৃত সিরাজ শেখ ও সালেহা বেগম দম্পত্তির ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার। সে তার বৃদ্ধ মা সালেহা বেগমকে নিয়ে রঙের বাজার এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে তার বোনের ঘরে বসবাস করে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা, খাদিজা আক্তার ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক যুগ আগে চার মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে মারা যান রিকশা গ্যারেজের শ্রমিক সিরাজ শেখ। আধাশতাংশ জমির ওপর ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর ছাড়া ছেলে মেয়েদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি সিরাজ শেখ। ছয় বছর বয়স থেকে অন্য ভাই বোনদের সাথে শুরু হয় খাদিজার জীবন সংগ্রাম। অন্যের ফসলি জমিতে নিরানীসহ বিভিন্ন কাজ করে সংসার ও পড়াশোনা ভালোই চলছিল খাদিজার। বড় ভাই বোনেরা বিয়ে করলেও মাঝে মধ্যে খাদিজা ও তার মাকে সহযোগিতা করত।

তবে কয়েক বছর ধরে খাদিজার বড় বোন মঞ্জিলা বেগমের স্বামী রাজমিস্ত্রী সহকারী সালাম বেপারী ভবন থেকে পড়ে গিয়ে এখন অসুস্থ। মেঝো বোন সাহিদা বেগম আগুনে পুড়ে গিয়ে অসুস্থ। তার স্বামী রুবেল ব্যাপারী ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। সেঝো বোন পিংকি আক্তারের পাকস্থলী ছিদ্র হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। ভাই মিরাজ শেখ পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। তিনি তার দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আংগারিয়াতে ভাড়া থাকেন। খাদিজা আক্তারের মা সালেহা বেগম বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। সাংসারের খরচ, মায়ের ওষুধ, নিজের পড়াশোনা সকল কিছুর ব্যয়ভার খাদিজা আক্তারের বহন করতে হয়। খাদিজা অন্যের ফসলী জমির নিরানিসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ করে উপার্জন করেন। কঠোর পরিশ্রমের এসব কাজ করেও খাদিজা পড়াশোনা ছেড়ে দেয়নি কখনো। হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের প্রাকটিস করেন।

খাদিজা আক্তারের নারী ক্রিকেট দল শরীয়তপুরের হয়ে ঢাকা, রংপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিজয় অর্জন করেছে। পরিবারের অর্থাভাবে এখন আর খাদিজা আক্তার ক্রিকেট প্রাকটিস করেন না। শরীয়তপুরের আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ওই কলেজেই খাদিজা আক্তার ভর্তি হয়েছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গেলে হাসপাতালের সিঁড়ির নিচ থেকে খাদিজা আক্তারের সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। সাইকেল চুরি হওয়ার পর খাদিজার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

বাইসাইকেল উপহার পেয়ে খাদিজা আক্তার বলেন, ইউএনও স্যার আমার পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি আমাকে একটি বাইসাইকেল দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে সাইকেলটি দিতে চেয়েছিলেন, সেটি চালাতে আমার কষ্ট হবে বলে স্যারকে জানিয়ে ছিলাম। এরপর তিনি আমার পছন্দ অনুযায়ী একটি সাইকেল কিনে দিয়েছেন। আমি এখন থেকে নিয়মিত কলেজে যেতে পারব। যারা আমার পরিবারকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছে, তাদের প্রতি আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। ছোট্ট একটি চাকরি পেলে আমি পরিবারকে নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারতাম। ফসলি জমিতে কষ্টের কাজ করতে হত না।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, খাদিজার সংগ্রামের কথা আমি জানার পরে তাকে তাৎক্ষণিক একটি বাইসাইকেল দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। তখন সে তার পছন্দমত সাইকেল দাবি করে। তার পছন্দমত সাইকেল দিতে গিয়ে একটু দেরি হয়েছে। খাদিজার বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসা ও তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে উপজেলা প্রশাসন।

এআরএস