নলছিটিতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম

ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকার অনুরাগ দেশি মুরগি পালন সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে।

অনুরাগ সমিতির সদস্যদের দাবি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর কর্তৃপক্ষ তাদের নামে বরাদ্দের ৮ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সময় আটকে রেখে অফিসের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে নিম্নমানের ঘর নির্মাণ করতে চেয়েছিল। তবে তারা অফিসের এ সিদ্ধান্তকে না মানায় নির্দিষ্ট নকশায় ঘর নির্মাণকাজ শুরু করার পরও নিয়মানুযায়ী হয়নি অযুহাত দেখিয়ে কয়েকজন সদস্যের ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় প্রকল্পের এলএসপি অহিদুল ইসলাম সোহাগ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এলডিপি প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে পৌরসভার অনুরাগ পিজি সমিতি, মগর ইউনিয়নের কাঠিপাড়া সমিতি, নাচনমহল ইউনিয়নের খাগড়াখানা দেশি মুরগি পালন পিজি সমিতি ও কুলকাঠি ইউনিয়নের বিকপাশা গ্রামে ছাগল পালন পিজি সমিতির মোট ১৬০ জন সদস্যদের নামে ঘর নির্মাণের জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে ৩২ লাখ বরাদ্দ আসে। গত সেপ্টেম্বর বিকপাশা ছাগল পালন সমিতি ছাড়া বাকি তিনটি সমিতির সদস্যদের মাঝে ২৪ লাখ টাকা ব্যাংক হিসেবে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে কুলকাঠি ইউনিয়নে বিকপাশা গ্রামের ছাগল পালনের ৪০টি ঘর নির্মাণকাজ এখনো শুরু করেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

কারণ হিসেবে তারা জানান, মুরগির ঘরের চেয়ে ছাগলের ঘরের সাইজ বড় হওয়ায় ২০ হাজার টাকায় উপকারভোগী সদস্যরা ছাগলের ঘর নির্মাণ করতে রাজি হয়নি। তাই তাদের নামের বরাদ্দের ৮ লাখ টাকা অফিস এর ব্যাংক হিসেবে জমা রাখা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের খাগড়াখানা সমিতি ও মগর ইউনিয়নের কাঠিপাড়া দেশি মুরগী পালন পিজি সমিতির উপকারভোগী সদস্যদের কাছে টাকা না দিয়ে অফিস স্ট্যাফদের প্রছন্দের ঠিকাদার ও মিস্ত্রি দিয়ে ধীর গতিতে কাজ করার।

সমিতির সদস্য ফাহমিদ পাপড়ি, মমতাজ বেগম, সুরমা বেগম, রেকসানা বেগম, মালা বেগম ও সাহিদা সুলতানার অভিযোগ, অফিসের লোকজনের মাধ্যমে ঘর না করায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে এ সমিতি বাদ দিতে চাইছেন। গত তিন মাস ধরে পিজি সমিতির মাসিক সভা ও সভার সম্মানী ভাতার টাকাও বন্ধ রেখেছেন।

লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) অহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, প্রতিটি ঘরে ১৪ ফুট আর্দ্রতারোধক ইনসুলেশন পেপার, ৫ সিএফটি মেহগনি কাঠ, সীট, টিন ও সিমেন্টের খুঁটিতে রড দিয়ে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ঘর করার কথা ছিল। তবে অনুরাগ পিজি সমিতির সদস্যদের দুইজন সদস্য নিয়মবহির্ভূত ঘর নির্মাণ শুরু করায় বাধা দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছে। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা দিয়ে হামলার হুমকি দিয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, তিন মাস পূর্বে পৌরসভার অনুরাগ পিজি সমিতির সদস্যদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে প্রতি সদস্যকে ২০ হাজার করে ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়। তারা সে টাকা আত্মসাত করেছে। মুরগির ঘর নির্মাণের জন্য অফিস ডেকে কয়েকবার নির্দেশনা ও নোটিশ পাঠানোর পরও তারা নির্মাণ করেনি। সবশেষ গত ১৯ অক্টোবর প্রর্যন্ত সময় দেয়া হলেও কথা শেনেনি। বিষয়টি প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুবিধাভোগী ওই সদস্যদের দ্রুত ঘর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। সরকারি টাকা আত্মসাত করে কেউ পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এআরএস