জনবসতিপূর্ণ এলাকায় শত শত পোলট্রি ফার্ম, ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ

জাহাঙ্গীর আলম জাবির, বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় শতাধিক পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে ওঠায় মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ডিম উৎপাদন করা ফার্মগুলোতে দুর্গন্ধ ছড়ায় বেশি। আর এতে ফার্ম সংলগ্ন বাসাবাড়ির মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছে।

জনবসতি এলাকার ৫০০ গজ দূরত্বে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করার ফার্ম করার নিয়ম থাকলেও বুড়িচং উপজেলায় এসব নিয়ম-কানুন কেউ মানছেন না। স্কুল-কলেজ মাদরাসা কিংবা জনবসতির পাশে এবং কোথাও কোথাও জনবসতির মধ্যেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য পোলট্রি ফার্ম। যার বেশির ভাগেরই নেই পরিবেশ ছাড়পত্র ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশন।

অনেক ডিম উৎপাদনকারী ফার্মের মালিকরা পরিবেশ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে মুরগির বিষ্ঠা থেকে গ্যাস উৎপাদনে বায়োগ্যাসের ব্যবস্থা করেছেন। কিছু মালিক আবার বায়োগ্যাসের মুখগুলো উন্মুক্ত রাখায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও আশপাশে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া বেশির ভাগ পোল্ট্রি পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় পরিবেশ ও জনমানুষের ক্ষতি হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার মডেলপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বাবুল হোসেন ও মাইনুদ্দিন  নামে দুই ভাই বুড়িচং গ্রামের মডেলপাড়ায় জনবসতির মধ্যেই ডিম উৎপাদন পোলট্রি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ফার্মটি পরিচালনা করে আসছেন। এতে ফার্মের দুর্গন্ধে আশপাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষ খুব দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তা ছাড়া ফার্মের ৫০ গজের মধ্যে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুড়িচং মডেল একাডেমি অবস্থিত। যার ফলে এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়ও বিঘ্ন ঘটছে এবং আশেপাশের দুর্গন্ধে নানা সমস্যা হচ্ছে।

ফার্মের পার্শ্ববর্তী এক প্রতিবেশী হৃদয় বলেন, মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বসবাস করাই মুশকিল হয়ে গেছে। কিন্তু চাকরি জীবনের সব ব্যয় করে মডেলপাড়ায় বাড়ি করেছি। তাই বাধ্য হয়েই মানবেতর জীবনযাপন করছি। বাবুল ও মাইনুদ্দিন কারো কথাই কর্ণপাত করছে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কয়েকবার অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাইনি। তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

পোলট্রি ফার্মের মালিক বাবুল হোসেন বলেন, আমি যখন এখানে ফার্মটি স্থাপন করি তখন এখানে কোনো জনবসতি ছিল না। এখন যেহেতু ফার্মের চার দিকে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাই সুবিধা মতো সময় অন্য জায়গায় ফার্মটি সরিয়ে ফেলব। পরিবেশ ছাড়পত্রের বিষয়ে বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র নেইনি। তবে দুর্গন্ধ যেন না ছড়ায় সেজন্য বায়োগ্যাসের ব্যবস্থা করেছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বায়োগ্যাস করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছে।

বুড়িচং উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নাছিমা আক্তার বলেন, জনবসতির ৫০০ গজের মধ্যে পরিবেশ বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার নিয়ম নেই। কেউ যদি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করে থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা পেলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, জনগণের বসবাসে বিঘ্ন ঘটবে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। দুর্গন্ধ ছড়ায় কিংবা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জনবসতি থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এআরএস